সমাজ সংস্কারে রোকেয়ার সাহিত্য
সমাজ সংস্কারে রোকেয়ার সাহিত্য
বিহারের ভাগলপুরের অধিবাসী খান বাহাদুর সাখাওয়াত হোসেনের স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে তারঁ সাথে ১৮৯৮ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সী রোকেয়ার বিয়ে হয়। তাঁরপর তিনি রোকেয়া খাতুন থেকে হন " রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন" (মিসেস আর.এস.হোসেন)।
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট স্বামীর সংস্পর্শে এবং তাঁর সহায়তায় ইংরেজি ভাষা এত ভালোভাবে রপ্ত করেন যে, স্বামীর সরকারি কাজে অর্থাৎ বিভিন্ন লেখালেখিতে তিনি স্বামীকে সাহায্য করতেন৷ স্বামীর উৎসাহে ও অনুপ্রেরণায় রোকেয়ার জ্ঞানার্জনের পথ অধিকতর সুগম হয়।
রোকেয়ার সাহিত্য জীবন শুরু হয় তাঁর স্বামীর অনুপ্রেরণায়। তিনি ১৯০২ খ্রীস্টাব্দে "পিপাসা" রচনার মধ্য দিয়ে সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন।
রোকেয়ার গ্রন্থসমুহঃ
নাম | প্রকাশকাল |
মতিচূর -প্রথম খন্ড | ১৯০৪ |
মতিচূর -দ্বিতীয় খন্ড | ১৯০৭ |
সুলতানার স্বপ্ন | ১৯০৮ |
পদ্মরাগ | ১৯২৪ |
অবরোধবাসিনী | ১৯৩১ |
এছাড়া একাধিক ছোটগল্প ও রম্য রচনা রয়েছে তাঁর।
সমাজ-সংস্কারে তাঁর সাহিত্যঃ
(মতিচূর প্রথম খন্ড) মূলত বিভিন্ন প্রবন্ধের সংকলন গ্রন্থ। সবগুলি প্রবন্ধের বিষয়ই হচ্ছে তৎকালীন মৃত সমাজ। সেই সমাজের ক্ষতগুলি তিনি চিহ্নিত করেছেন এবং চিহ্নিতকরণ প্রকিয়ায় তাঁর যে ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায় তা সত্যিই অসাধারণ। তিনি নারী ও পুরুষের সামাজিক অবস্থানও তুলে ধরেছেন।
দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার বলেন, "সমাজ সংস্কার করা এক কথা, আর সমাজকে বেদম চাবুক মারা আর এক কথা। চাবুকের চোটে সমাজদেহে ক্ষত হইতে পারে। কিন্তু তা দ্বারা সমাজের কোনো ক্ষতি বা অভাব পূরণ হয় না। মতিচূর এর রচয়িত্রী কেবল ক্রমাগত চাবকাইতেছেন...। তিনি যদি বিদ্বেষহীন ভাষায় নারী জাতির দুঃখের কাহিনী বিবৃত করিতে পারেন তাহা হইলে সমাজে রক্ষণশীলত্বের বন্ধন আপনা-আপনিই শিথিল হইয়া আসিবে।"
এ বক্তব্যটিতে বুঝাই যাচ্ছে রোকেয়া কতটা স্পস্ট ভাবে সাহসের সাথে সমাজের অনাচারের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। এই গ্রন্থে 'গৃহ ও পিপাসা' প্রবন্ধে যে সমাজ চিত্র তুলে ধরেছেন তা যথাযত।
মতিচূর দ্বিতীয় খন্ডে বর্ণিত হয়েছে নারীর ব্যথা ও দুর্দশার কথা। তর্কে তিনি যেসব যুক্তি উপস্থাপন করেছেন তা যে কেবলই তর্ক নয় তা গ্রন্থটি পাঠ করলেই অনুধাবন করা সম্ভব। এই গ্রন্থের প্রবন্ধগুলির মধ্যে "সুলতানার স্বপ্ন "একটি রূপকধর্মী ব্যঙ্গাত্মক রচনা। প্রবন্ধ ছাড়াও এই গ্রন্থে রয়েছে একাধিক গল্প ও রূপক কাহিনী যেমনঃ ডেলিশিয়া হত্যা, সৌর জগৎ জ্ঞানফল, নার্স নেলী, নারী সৃষ্টি ও মুক্তিফল। 'নার্স নেলী ' গল্পে জীবনের অন্য একটা দিক তুলে ধরেছেন। তিনি এখানে বাইরের জগৎ সম্পর্কে সাবধান হওয়ার জন্যে নারীকে সতর্ক করেছেন। সেই সাথে সংসারের শান্তি ও পবিত্রতা রক্ষার জন্যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাকীগুলিতে নারীর মর্যাদা রক্ষা ও নারীর শক্তি নিয়ে লিখেছেন।রোকেয়া অনুভব করেছিলেন যে নারীকে যদি যথাযথ স্থানে প্রতিষ্ঠিত করা না যায় তাহলে সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়।
পদ্মরাগ উপন্যাস:
"পদ্মরাগ" একটি উপন্যাস। এই উপন্যাসের ভূমিকা লিখতে গিয়ে কলকাতার ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজের অধ্যাপক বিনয়ভূষণ সরকার লিখেন, "কি হিন্দু, কি মুসলমান, কি খ্রিস্টান সকল সমাজেরই অনেক ক্ষতস্থান দেখিয়া মর্মে ব্যথা অনুভব করিতে হইবে। গ্রন্থকর্ত্রী শুধু ক্ষতস্থানে আঙ্গুলি নির্দেশ করিয়াই আপনার কর্তব্য শেষ করেন নাই-তারিণীভবনের পরিকল্পনায় তিনি ব্যাধির সমাধানেরও ইঙ্গিত করিয়াছিলেন।"
এই উপন্যাসে লেখিকা তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে আদর্শ,কর্মপদ্ধতি ও শিক্ষা সম্পর্কে যে আলোচনা করেছেন তা সত্যিই খুব নিখুঁত, যা মানব জীবনের আদর্শ হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রলোভনকে জয় করে মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করাই হচ্ছে তারিণীভবনের শিক্ষা। আর শিক্ষার মুক্ত আবহাওয়া ফলাফলই হচ্ছে এই উপন্যাসের সিদ্দিকার চারিত্রিক দৃঢ়তা ও শক্তি।
সুলতানার স্বপ্নঃ
Sultana's Dream(সুলতানার স্বপ্ন) মূলত একটা রূপক কাহিনী যা গল্পের আদলে একটা রূপক কাহিনী বর্নিত হয়েছে।তিনি যেভাবে নারী পুরুষের সমকক্ষতার আর্দশের কথা লিখে গেছেন তা আজকের দিনে নারী সমাজের জন্য একটা আদর্শ। তাঁর অসামান্য একটা দূরদৃষ্টি ছিল। যার পরিচয় আমরা পাই তাঁর 'সুলতানার স্বপ্নে' যেখানে তিনি বলেছিলেন -যাহা যাহা পুরুষ পারিবে, তাহাই নারী পারিবে।
আজ ২০২১ খ্রীস্টাব্দে নাররীরা রান্নাঘর থেকে সংসদ পর্যন্ত রয়েছে। মন্ত্রী, প্রধান মন্ত্রী, শিক্ষকতা,ডাক্তাীর,প্রকৌশলী,আইন পেশা সব জায়গায়ই এখন নারীদের বিচরণ।সমাজকে সংস্কার করে এই অবস্থানে আনতে অনেক সময় পার করতে হয়েছে৷ অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। সেই সমাজ-সংস্কারে নবাব ফয়জুন্নেছা ও রোকেয়া সাখাওয়াত হোসনের ভুমিকা অন্যন্য।
আরো পড়ুন→
___________________________________________________
ভাষা আন্দোলনের পটভূমি
ফোকলোর কাকে বলে?
সমাজ সংস্কারে নবাব ফয়জুন্নেছার অবদান (প্রথম মহিলা নবাব)
প্রবাদ
চন্দ্রমুখী মৎস্যকন্যা(রোমান্টিক গল্প)
ভিন্ন কিছু পড়ুন
Book review Three am( থ্রি এ এম)
বুক রিভিউ (তোমাকে ভালোবাসি হে নবী)