মনের ভয় নাকি ভুতের ভয়?
লোকশ্রুতি থেকেও ভয়ের সৃষ্টি ★
গঞ্জে যাওয়ার রাস্তাটা খুবই নীরব । এই নীরব রাস্তার পাশে রয়েছে একটা চিতাখোলা বা শ্মশান যেখানে মৃত মানুষ পোড়ানো হয়। এই রাস্তা দিয়ে দিনের বেলা একা গেলেই শরীরে কাটা দিয়ে উঠে।
শ্মশানের কাছের এই রাস্তা ঘীরে গড়ে উঠেছে নানা রকম লোমহর্ষক ভৌতিক কাহিনী। কত কত মানুষের মৃত্যু ঘটেছে ভয় পেয়ে এই রাস্তায় তার কোনো হিসেব নেই। রাত হলেই এখানে ভয়ংকর সব ভূতের আড্ডা জমে। কাউকে একা পেলে ভয় দেখায়।আবার অনেককে নাকি মেরেও ফেলে।
তাই এখন রাতে এই রাস্তা দিয়ে একা যেতে কেউ সাহস পায়না। আজকে আমার গঞ্জ থেকে ফিরে আসতে রাত ১২ টার উপরে বেজে গেলো। ভয় পাচ্ছি খুব। চারেদিক অন্ধকার ও ঝিঝি পোকার ডাক। মাথার উপর কোনো একটা গাছের ডালে বসে প্যাঁচা বিভিন্ন ভংগীতে ডাকছে। এমনিতেই ভয় পাচ্ছি এর মধ্যে অদ্ভুত এই প্যাঁচার ভয়ংকর ডাক। আমার গায়েরলোম দাঁড়িয়ে গেলো। মনে হচ্ছে আমার শরীরের রক্তচলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে পৌছেগেলাম সেই ভয়ংকর শ্মশানের কাছে। এই রাস্তার ২ পাশ ঘীরে রয়েছে অনেক বাঁশঝাড়।দিনেরবেলাতেই ভয় পাওয়া যায় এখানে আর এখন তো রাতই। আমার শরীরের কাপড় ভীজে যাচ্ছে ঘামে। মনে হচ্ছে আমার উপর যেনো কেউ পানি ঢেলে দিয়েছে। মনে মনে দোয়া পড়তে লাগলাম। একটু সাহস করে লুংগী দিয়ে ল্যাংটি বানালাম। সাথে সাথে দিলাম এক দৌড়। বাঁশ ঝাড়ের মাঝখানে হঠাৎ এই অন্ধকারের মধ্যে একজনের সাথে ধাক্কা খেলাম। আমি নিশ্চিত এইটাই শ্মশানের ভুত । সাথে সাথে ভূতটি আমাকে খপ করে ধরে ফেললো। আমি ভাবলাম আজই মনে হয় আমার জীবনের শেষ দিন। আমার হৃদপিন্ড থেমে যাওয়ার পথে। ভাবলাম যেহেতু মরেই যাবো আজকে ভূতের সাথে খেলা হবে। এই বলে আমিও ভূতটিকে ধরে ফেললাম। ভুতের সাথে কয়েক ঘন্টা মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছি।
ভাবলাম আজকে ভূতকে ছাড়বোনা। আজকে ভূতটিকে মেরে ফেলবো। কিন্তু ভূতটি অনেক শক্তিশালী। আমাকে এক চড় মারলো ভাবলাম এই বুঝি আমি শেষ। তাও ভূতটিকে আমি ছাড়লাম না। অপেক্ষা করছি ফজরের আজানের।কারণ অনেকে বলেছে আজান দিলে নাকি ভূত-প্রেত ভয়ে পালিয়ে যায়। একটুপরেই হঠাৎ ফজরের আজানের ধ্বনি বাতাসে ভেসে আসছে। ভাবলাম এখন ভূত দুর্বল হয়ে যাবে। তাই আমি চোখ বন্ধ করে আরও শক্ত করে চেপে ধরলাম ভূতটিকে। একটু পর ভূতটি ভয়ংকরভাবে চিৎকার দিয়ে বললো তুই আমাকে ধরে রাখছিস? আমিও চোখ বন্ধ করে বলতে লাগলাম হুম আজ তর রেহাই নেই। তখন ভূতটি আরেকটি চড় বসিয়ে দিলো আমার গালে। তখন চোখ মেলে যা দেখলাম সত্যিই আমি এটা দেখার প্রস্তুত ছিলাম না। দেখি আমার চাচা আমাকে ধরে রাখছে আর আমি চাচাকে ধরে রেখেছি।
আমার আসতে দেরি হচ্ছিলো তাই চাচা গিয়েছিলো আমাকে এগিয়ে নিয়ে আসতে।
পথের মধ্যে ২ জনের ধাক্কা। চাচা ভাবলো আমি ভূত আর আমি ভাবলাম চাচা ভূত।