লোকবিশ্বাস ও লোকসংস্কার কী?what is folk belief and superstation

লোকবিশ্বাস ও লোকসংস্কার কী?

আজকের আর্টিকেলে যে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে তা হলোঃ

  1. বিশ্বাস কী(what is belief )? 
  2. লোকবিশ্বাস কী? (what is folk belief?)
  3. লোকসংস্কার কী (What is superstation?) 
  4. লোকবিশ্বাস ও লোক সস্কারের উদাহরণ(What is folk belief and superstation?) 


বিশ্বাস-অবিশ্বাস  নিয়েই মানব অস্তিত্ব টিকে আছে সুশৃঙ্খলভাবে। মানবমন কত কিছুতেই না বিশ্বাস করে থাকে৷ কেউ কেউ জ্বীন,ভূত,জলদেবী,দৈত্য-দানব প্রভৃতিতে বিশ্বাস করে৷ কেউবা অদৃশ্য জগৎ পেরিয়ে বিশ্বাসকে আস্থারূপে জীবনের সাথেই তুলনা করেন৷ কাজল আগারওয়াল এবং মহেশ অভিনীত একটি তামিল মুভি যেটি ইংরেজি ভাষান্তর করা হয়েছে 
Lover-2 নামে। এই মুভির ২৬ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডে মহেশের বাবা কথা প্রসঙ্গে বলেন,

" Life is all about trust, Not a business. "

এখন প্রশ্ন হলো বিশ্বাস বলতে কি বুঝায়?

এ ক্ষেত্রে বলা যায়,

  • মানুষ মনে যা ধারণ ও লালন করে এবং যা অবচেতনভাবেই     মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তাই বিশ্বাস"

আরও বলা যায়,

  • “Belief is an acceptance that something exists or is true, especially one without proof.

অর্থাৎ,  "কোন রকম প্রমাণ ব্যতিরেকে কোন কিছুর অস্তিত্বকে সত্য হিসেবে ধরে নেওয়াই হলো বিশ্বাস।

তাছাড়া " Merriam-Webster dictionary তে বলা হয়েছে-

  • "Belief is a state or habit of mind in which trust or confidence is placed in some person or thing. "

বিশ্বাস হলো মনোজ। এ বিশ্বাস হতে পারে সমাজের সকলের আবার হতে পারে কোনো একক ব্যক্তির। তবে লোকসমাজে প্রচলিত সংস্কারের উৎপত্তি যে বিশ্বাস থেকে তা একক নয় বরং গোষ্ঠীর সকলের। আর তাকেই লোকবিশ্বাস বলা হয়। 

লোকবিশ্বাসকে ফোকলোরবিদগণ বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যেমনঃ

  •  সংহত এক জনসমষ্টি যে বিশেষ বিশেষ আচার আচরণ এবং ক্রিয়াদিকে কর্তব্য অকর্তব্য বলে বিবেচনা করে, যেগুলির সঙ্গে শুভাশুভবোধ জড়িত, তাই হলো লোকবিশ্বাস।"

কার্ভেথ রীড বিশ্বাস প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন,

  • “The attitude of mind in which perceptions are regraded as real judgement as true or matters fact actions and  events as about to have certain results. It is a series and respectful attitude;for matter of fact compels us to adjust our behaviour to it, whether we have power to alter it or not.

বিশ্বাস অবিশ্বাস নিয়েই আমাদের জীবন বিশ্বাস থেকেই সংস্কারের উৎপত্তি। তাহলে আমরা বলতে পারি,

  • মানুষের মনের বিশ্বাসটি যখন তাদের কাজের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় এবং সমাজে তা স্বীকৃতি লাভ করে তাহলে তাই হল সংস্কার।

সংস্কারের ইংরেজি অনেকে Superstition ধরে নিয়েছেন। কিন্তু তা যথার্থ নয়৷ কারণ Superstition দিয়ে শুধু সংস্কারের মন্দ দিক বুঝানো হয়।অথচ সকল সংস্কার মন্দ নয় 

সংস্কারের ইংরেজি Superstition ধরেই অনেকে লোক সংস্কারকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যেমনঃ

  • “A superstition is something which is " left over " from    the past and which continues to prevail without being understood.” 

অর্থাৎ সংস্কার হলো যা অতীতকাল হতে চলে আসছে এবং যা বর্তমানে না বুঝেও অনুসৃত হচ্ছে।

  •  Superstition are, however,but beliefs of which there is     longer a whole hearted acceptance. They are practices that followed without conviction, but with an uneasy     feeling that it will do no harm to carry them out, if by     chance we thus get on the good side of powers whose     existence we may at times doubt. 

অর্থাৎ, সংস্কার হলো সেইসব বিশ্বাস, যেগুলো সর্বান্তঃকরণে গৃহীত নয়; আসলে এগুলি হল কতগুলি আচার, যেগুলি দৃঢ়বিশ্বাস ব্যতিরেকে অনুসৃত হলে কোনরকম ক্ষতিকারক হবেনা, দৈবক্রমে যেগুলির দ্বারা সুফলও লাভ করা যেতে পারে -এই মানসিকতায় ।

লোকসংস্কারকে ফোকলোরবিদ আরও নানাভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, যেমনঃ

  • লোকসংস্কার হলো সেইসব আচার আচরণ এবং ক্রিয়াকলাপ যেগুলি পালনীয় কিংবা বর্জনীয় বলে সংহত জনসমষ্টি শুধু বিশ্বাস করেনা ব্যবহারিক জীবনেও তা মেনে চলে।”

সবাই ভালোভাবে বাঁচতে চায়। নিজের ভালোর পাশাপাশি পরিবার ও প্রিয়জনদেরও ভালো রাখতে চায়। প্রিয়জনদের বিপদ কেউই দেখতে চায় না৷ প্রিয়জনদের কাছে মোটামুটি সবাই দুর্বল।মানুষকে  শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে।তাই বলে মানুষ প্রকৃতির সকল শক্তির চেয়ে বলীয়ান নয়। মাঝে মাঝে মানুষ অসহায় হয়ে যায়। বিশাল সমুদ্রের মধ্যে জাহাজ ডুবে গেলে সেখানে যদি একটুকরো কাগজও সামনে  পায় সেটি ধরে নিজের নিজের জীবন রক্ষা করতে চায়। মানুষজন নিজেদের ও পরিবারের মানুষকে নিয়ে বিপদমুক্ত, রোগমুক্ত ও সংশয়হীন সুখী জীবন কাটাতে চায়। এই সংশয়সন্দিগ্ধা মনের দোলাচল অবস্থাতেই মানুষ বিশ্বাস ও সংস্কারের দারপ্রান্তে উপস্থিত হয়।লোকবিশ্বাস ও সংস্কারের মূলে আছে অমঙ্গল চিন্তা। তাছাড়া অর্থহানি,স্বাস্থ্যহানি,শাস্তিভোগ বিচ্ছেদ বিড়ম্বনা ও বিপদ আশঙ্কা বা ভয় প্রভৃতিই হলো বিশ্বাস সংস্কারের মূলভিত্তি।

উদাহরণ দিয়ে পরিষ্কার করা যাক,

পৃথিবীতে যত ভালোবাসা আছে তার মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী ভালোবাসা হলো সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা। দাম্পত্য জীবনের মুল লক্ষ্য কেবলই যৌনলিপ্সা নয়। দাম্পত্য জীবনের চরম সার্থকতা সন্তানকে ঘিরেই। দম্পতির যখন সন্তান না হয় আশেপাশের মানুষ নানা রকমভাবে কটোক্তি করে। অনেকে আটখোড়েও বলে৷ তখন দম্পতি সন্তান লাভের জন্যে নানা রকম বিশ্বাস-সংস্কারে লিপ্ত হয়ে পরে৷ আমরা এখনো দেখতে পাই সন্তান লাভের আশায় অনেকে মন্দিরের পাশের বটগাছে সুতা বাঁধে। মসজিদ ও মাজারে মানত করে। কিছুদিন আগে একটি নিউজ এসেছে,

সন্তান লাভের আশায় নারীরা গোসল করে ভেজা কাপড়ে একটি মাঠে আঁচল বিছিয়ে বসে আছে৷ কতটা অসহায় হলে মানুষ এরূপ করতে পারে এটা ভাবার বিষয় নয়কি? কে জানে হয়তো সন্তান না হলে তার স্বামী দ্বিতীয় বিবাহও করতে পারে। এটা তো অস্বীকার করার কিছু নেই। এরূপ হরহামেশাই ঘটে থাকে৷ধরুন অনেক চিকিৎসা করানোর পর কিংবা সংস্কার পালনের পর একটি সন্তান লাভ করল। এই সন্তান আবার অসুস্থ হলো। কোনো চিকিৎসায়ই ভালো  হচ্ছেনা। তখন কেউ যদি বলে রাতের অন্ধকারে একা নদীর সাত ঘাট থেকে পানি আনতে পারলে সন্তানের শেষ চিকিৎসা করা যাবে, পৃথিবীর বুকে কোন মা হয়তো বসে থাকবে না। আর এর ফলে কাকতালীয়ভাবে যদি সন্তান আরোগ্য লাভ করে এর রেশ কতদূর অব্দি চলবে তার কোনো হিসেব নেই। 


আরও পড়ুন





Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url