জোনাকির মুক্তি
জোনাকির মুক্তি
আমি শশীকান্ত।আজ ভোরে সূর্য দেখে দিন শুরু হয়েছে আমার।সারাদিন কাজ করার পর পড়ন্ত বিকেলে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে বাড়ির দক্ষিণ বারান্দায় বসে সারাদিনের কাজের কথা ভাবতে শুরু করলাম। কখন যে সন্ধা ঘনিয়ে এল টেরই পেলাম না। অারেক কাপ চা নিয়ে অাবার বারান্দায় গিয়ে বসলাম। সময়টা শরৎকাল। শরৎকালের আকাশ খন্ড খন্ড সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়।আকাশও অনেক স্বচ্ছ মনে হয়। তবে রাতে চাদরে যেন এই দৃশ্যের সৌন্দর্য অন্য রূপে সেজে নতুন বধুর ন্যায় চোখের সামনে ধরা দিয়েছে।আকাশে গোল রুটির মতো বিশাল আকৃতির একটি চাঁদ দেখা যাচ্ছে।একটু আগে চাঁদটি কিছুটা লালবর্ণের ছিলো। ধীরে ধীরে পূর্ব আকাশ থেকে তার অবস্থান সরিয়ে নিচ্ছে সেই সাথে তার লালছে বর্ণ দূর হয়ে সাদা দুধের রংয়ে মিশ্রিত হচ্ছে।আমার গায়ে এই আলো এসে পরার সাথে সাথে মনে হলো আমি যেনো ধবল দুধে স্নান করছি। এসব দেখতে দেখতে চায়ের কাপে ঠোঁট মিলিয়ে চা পান করার চেষ্টা করলাম। যা! কি আপদরে বাবা! চা শেষ! মনে মনে ভীষণ রাগ হলো। কেন এখনই চায়ের কাপটি খালি হতে হবে?আমি চেয়ারে বসে অবচেতনভাবেই ডাক দিলাম "কমলিনী... কমলিনী...। কোন সারা না পেয়ে হঠাৎ মনে পড়লো কমলিনীর মৃত্যু হয়েছে নৌকাডুবিতে বেশিদিন হয়নি।
Original photo collected from internet |
একথা মনে হতেই বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠল। আকাশের দিকে তাকালাম।একটু আগেও যে আকাশ জ্যোতিষ্কের সাজে সজ্জিত ছিল এখন আর আগের মতো মনে হচ্ছেনা। এক্টু আগেও আকাশ থেকে মধুময় চাঁদের আলো চুইয়ে চুইয়ে পরছিল এখন তা হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে যেন চাঁদটি নীলাভ বর্ণের হয়ে যাচ্ছে।তার গা থেকে যেন গরলপ্রবাহ ভূপৃষ্ঠে নেমে পৃথিবীকে বিষাক্ত করে দিচ্ছে। চেয়ার থেকে উঠে গেলাম।ভালো লাগছেনা। সবকিছু কেমন যেন জীম্... ধরে আছে। চায়ের কাপটি রাখার জন্য ঘরের ভিতর প্রবেশ করলাম। বিদ্যুৎ নেই।কিন্তু ঘরটি যতটা অন্ধকার থাকার কথা ততটা নেই। মিটিমিটি আলো জ্বলছে। পাশে তাকাতেই চোখ পরল ডেসিন টেবিলের উপর যেটির সামনে বসে কমলিনী চুল আচরাতো। কপালে টিপ পরতো আর আমিি টিপ পরতে সাহায্য করতাম। এই ডেসিনটেবলের আয়নার সামনেই একটি স্বচ্ছ কাচের কৌটা। এর ভীতর থেকেই মিটিমিটি আলো আসছে। কাছে গেলাম দেখি অনেকগুলি জোনাকিপোকা। এদের গা থেকেই আলো আসছে। কমলিনী জোনাকী পোকা অনেক পছন্দ করতো। আমরা প্রায়শই রাতের অন্ধকার চাদরমুুুুরি দিয়ে আমাদের বাড়ির পাশের মেহগনি বাগানে যেতাম। সেখানে সারিবদ্ধভাবে ৩০০-৪০০ মেহগনি গাছ লাগানো।গাছগুলো বেশি বড় হয়নি। সেখানে রাতের অন্ধকারে যেন জোনাকির মেলা বসে। দুর থেকে দেখলে মনে হয় এ যেনো আলোকসজ্জায় সজ্জিত এক বিয়ে বাড়ি। রেললাইনে ২ জন দুই পাশ থেকে হাতে হাত রেখে যেভাবে হাটাহাটি করে আমরা এই জোনাকিদের ভীরে সেইভাবে হাটতাম। কমলিনীর মৃত্যুর পর সেখানে যাওয়ার ইচ্ছেটাও মরে গেছে। কিন্তু আজ কৌটাবন্দী জোনাকিগুলো দেখে কেন যেন আজ সেখানে যেতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে।
নিস্তব্ধতার মাঝে হাতে জোনাকি ভর্তি কৌটা নিয়ে হাটতে হাটতে মেহগনি বাগানে পৌছালাম। আমাকে দেখে বাগানের জোনাকীগুলো দুর থেকে বলতে আরম্ভ করল," এই দেখ্ দেখ্ যে ব্যক্তি প্রায় প্রতিদিন আসতেন, বেশ কয়েকদিন পর আজ আবার আসতেছে। পাশ থেকে আরেকটি জোনাকি বলছে" খেয়াল করেছিস আজকে মানুষটি একা, সম্পূর্ণ একা। এসব শুনে আমার চোখ দুটি অজান্তেই ভিজে গেল। হঠাৎ এই অন্ধকারে কে যেন ধমকের স্বরে বলে উঠলো "একা মানে...একা মানে কী? সে একা নয় আমি আছি। প্রতিদিনের মতো আজকেও আমি তার সাথেই আছি। সে একা নয়। কন্ঠটা বেশ পরিচিত মনে হল। আরে, এযে আমার কমলিনীর কন্ঠ। সাথে সাথেই মনের মধ্যে চ্ছ্যাত করে উঠলো যেমনটা জলন্ত লাল কয়লার উপর ঠান্ডা পানি ঢেলে দিলে হয়। কমলিনী বলল, " শশীকান্ত...এই শশীকান্ত তোমার হাতে কাচের কৌটায় একমুঠো জোনাকি। তাদেরকে ছেড়ে দাও আমাদের চিরচেনা এই বাগানে। আমি তাদেরকে বোতল বন্দী করে আমার কাছে রেখে দিয়েছিলাম। এখন এদের মুক্তি দিয়ে দাও। যখনই এই বাগানে আসবে এবং জোনাকিদের দেখবে তুমি ভেবে নিও আমি এদের মাঝেই আছি। এদের সাথেই আছি। কমলিনীর কথা শেষ হতে না হতেই আমি জোনাকিগুলি কৌটা থেকে বের করে উপরের দিকে তারাবাতির মতো ছড়িয়ে দিলাম। কমলিনী বলল,"শশীকান্ত... উপরের মেহগনি পাতার ফাঁকে তাকাও, তাকালাম। চাঁদের আলো ছিড়ে ছিড়ে জোনাকির মতো আলো দিচ্ছে। এ যেন, পরিপূর্ণ জোনাকির মুক্তি।
নিচে তাকাতেই কমলিনী নেই...
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
ভাষা আন্দোলনের পটভূমি
সমাজ সংস্কারে রোকেয়ার সাহিত্য
সমাজ সংস্কারে নবাব ফয়জুন্নেছার অবদান (প্রথম মহিলা নবাব)
প্রবাদ
চন্দ্রমুখী মৎস্যকন্যা(রোমান্টিক গল্প)
ভিন্ন কিছু পড়ুন
Book review Three am( থ্রি এ এম)
বুক রিভিউ (তোমাকে ভালোবাসি হে নবী)
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★