চন্দ্রমুখী মৎস্যকন্যা

চন্দ্রমুখী মৎস্যকন্যা। 

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। পশ্চিম আকাশে লালিমা দেখা যাচ্ছে৷  আকাশে খন্ড  খন্ড  মেঘ। বিশাল আকৃতির  ধূসর বা রঙিন মেঘমালা দেখতে অনেকটা পর্বতের মতোই মনে হয়৷ পাখিরা কিচিরমিচির করে তাদের নীড়ে ফিরে আসছে । ধীরে ধীরে আকাশের মেঘমালা মিলিয়ে অন্ধকারে রূপ নিল চারপাশ। পরক্ষণেই পূর্ব আকাশে বিলের পাড়ে বাঁশ ঝাড়ের  উপর দিয়ে ভরাট বৃত্তাকার চাঁদ উঁকি দিল। এখনো সে দুগ্ধরূপ হয়ে উঠেনি। এখনো সে মুখের উপরে লাল ঘোমটা টেনে আছে৷ লজ্জায়  তার মুখটি  রক্তিম আকার ধারণ করেছে নববধূর মতো। তবে তার ঘোমটা আর বেশি সময় টিকবে বলে মনে হচ্ছেনা। মিনিটকয়েক পর তাই হলো। এর সৌন্দর্য, রূপ,উজ্জ্বলতা ওজন স্তর বেদ করে সবুজ গাছে-ঘাসে-রাস্তা-ঘাটে-পানিতে এসে পরেছে। এখন সে সম্পূর্ণ রূপালীবর্ণ ধারণ করেছে। স্বচ্ছ পানিতে তার সৌন্দর্যপূ্র্ণ আলোকচ্ছটা পরতেই সমস্ত জলরাশি ঝিলমিলিয়ে উঠলো।  আদিত্য সবকিছু আনন্দ চিত্তে উপভোগ করছে। আদিত্য সাঁতার কাটতে ভালোবাসে৷ সারাক্ষণ তার মনে-ধ্যানে-জ্ঞানে-চেতনে-অচেতনে-অবচতনে সাঁতারের ভাবনাই ঘুরে বেড়ায়।

চন্দ্রমুখী মৎস্যকন্যা| চন্দ্রমুখী মৎস্যকন্যা।  সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। পশ্চিম আকাশে লালিমা দেখা যাচ্ছে৷  আকাশে খন্ড  খন্ড  মেঘ। বিশাল আকৃতির  ধূসর বা রঙিন মেঘমালা দেখতে অনেকটা পর্বতের মতোই মনে হয়৷ পাখিরা কিচিরমিচির করে তাদের নীড়ে ফিরে আসছে । ধীরে ধীরে আকাশের মেঘমালা মিলিয়ে অন্ধকারে রূপ নিল চারপাশ। পরক্ষণেই পূর্ব আকাশে বিলের পাড়ে বাঁশ ঝাড়ের  উপর দিয়ে ভরাট বৃত্তাকার চাঁদ উঁকি দিল। এখনো সে দুগ্ধরূপ হয়ে উঠেনি। এখনো সে মুখের উপরে লাল ঘোমটা টেনে আছে৷ লজ্জায়  তার মুখটি  রক্তিম আকার ধারণ করেছে নববধূর মতো। তবে তার ঘোমটা আর বেশি সময় টিকবে বলে মনে হচ্ছেনা। মিনিটকয়েক পর তাই হলো। এর সৌন্দর্য, রূপ,উজ্জ্বলতা ওজন স্তর বেদ করে সবুজ গাছে-ঘাসে-রাস্তা-ঘাটে-পানিতে এসে পরেছে। এখন সে সম্পূর্ণ রূপালীবর্ণ ধারণ করেছে। স্বচ্ছ পানিতে তার সৌন্দর্যপূ্র্ণ আলোকচ্ছটা পরতেই সমস্ত জলরাশি ঝিলমিলিয়ে উঠলো।  আদিত্য সবকিছু আনন্দ চিত্তে উপভোগ করছে। আদিত্য সাঁতার কাটতে ভালোবাসে৷ সারাক্ষণ তার মনে-ধ্যানে-জ্ঞানে-চেতনে-অচেতনে-অবচতনে সাঁতারের ভাবনাই ঘুরে বেড়ায়।   Original photo collected from internet    "জোনাকির মুক্তি" গল্পটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।  সাঁতার যেন তার প্রতিটি রক্তকণিকায় মিশে গেছে৷ একদিন সাঁতার না কাটলে সে সুস্থতা অনুভব করে না, স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেনা। শরীর মন দু'ই  নিস্তেজ হয়ে পরে। সাঁতার যেন তাকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছে। জলরাশি যেন প্রতিনিয়ত তাকে ডাকে ।  চাঁদের আলো গায়ে মেখে সবাই হাঁটতে পারে। কিন্তু সাঁতার কাটতে পারে কতজন ? অমাবস্যায় হাতে হারিকেন নিয়ে নদী,বিল বা পুকুর পাড়ে বসে পদযুগল  ভিজিয়ে পানিতে খেলা করতে  পারে ক'জন? প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য   উপভোগের বিষয় নয় কী?  চাঁদের আলো পেলে আদিত্য ঘরে বসে থাকতে পারেনা। সে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। সে রাস্তায় একা হাঁটে এবং জ্যোৎস্না কুড়ায়৷ সবশেষে প্রকৃতি নীরব হতে থাকলে নাইট আউলের বদলে "নাইট ফিশ" হয়ে সে পানিতে নেমে পরে।  এখন বর্ষাকাল। চার পাশ নতুন পানিতে থই থই।  বাড়ি থেকে হেঁটে মিনিট দশেক দূরের রাস্তা পার হলেই বিশাল বিল। বিলের নাম "স্বেতমধু বিল"।  স্বেতমধু বিলের মাঝখানে  খানিকটা উঁচু জায়গা আছে৷ এখানে পুরোনো একটি বাঁকা আম গাছ রয়েছে। বর্ষা ছাড়া অন্য সময়ে অনেকে এই গাছে উঠে বসে ঠান্ডা বাতাস গায়ে মেখে শীতলতা অনুভব করে।  বর্ষাকালে পুরো বিল পানিতে থই থই করে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।  স্বেতমধু বিল কানায় কানায় পূর্ণতা লাভ করেছে। এই বিলের পানিতে নেই কোনো আবর্জনা, নেই কোনো উষ্ক লতাপাতা । তাই হয়তো এর নাম " স্বেত মধু বিল" রাখা হয়েছে ৷ আদিত্য  চাঁদের আলো পেয়েই সাঁতার কাটার উদ্দেশ্যে "শ্বেত মধু " বিলের ধারে পৌঁছালো। সাথে কেউ নেই,  সে একা ৷  অবশ্য রাতে সে একা একাই  সাঁতার কাটে ৷ সাথী কাউকে পায় না। পাবেই বা কেন? সবাই তো আর তাঁর মতো পাগল নয় যে রাত-দুপুরে  যখন-তখন সাঁতার কাটতে যাবে। যাই হোক, আদিত্য সাঁতার কাটতে পানিতে নামবে এমন সময় মনে হলো তার কাঁধে পলিথিনের ব্যাগটি নেই৷  আশেপাশে খোঁজতে আরম্ভ করলো। অবশেষে খোঁজে পেল।  এটি মাটিতে পড়ে আছে।  ব্যাগটিতে একটি বাঁশের বাঁশি, একটি ছোট্ট টর্চলাইট এবং গুটিকয়েক সুগ্রাণ সম্বলিত মিষ্টান্ন। ব্যাগটি কাঁধে বেঁধে  বিলে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতারকাটা শুরু করল।  পানিতে ছপ্ ছপ্ শব্দ হচ্ছে শুধু। নিজেকে "নাইট ফিশ" ভেবে দু'হাত ঝাপটে ধাপিয়ে বেড়াচ্ছে৷  বাস্তবিকে "নাইট ফিশ" বলে কিছু আছে নাকী সে তা জানে না৷ না থাক, সেই না হয় প্রথম "নাইট ফিশ" হলো। আকাশের চাঁদটিও মজার ছলে আদিত্যের সাথে পাল্লা দিয়ে খেলা করছে। সে যে দিকে যাচ্ছে চাঁদটিও সেদিকেই যাচ্ছে৷  মানুষজন নেই তো কি হয়েছে? অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী চাঁদ তো ঠিকই তার সঙ্গী হয়েছে৷ চাঁদের আলোতে যেন সব কিছুই রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছে।  সাঁতার কাটতে কাটতে সে মাঝবিলের সেই চিরচেনা বাঁকা আম  গাছটির কাছে পৌঁছালো।  গাছটি একটু উঁচু জায়গায় ছিল বলে গোড়ার শিকড়গুলো থেকে এক হাত উপর  পর্যন্ত পানিতে ডুবে আছে নতুবা আরও অনেক অংশই ডুবে যেতো।  সে গাছে উঠে বসে বিলের চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলো। মাছের জাঁক লাফালাফি করছে। চাঁদের আলোয় মনে হচ্ছে, যেন রুপার চিরল খন্ডগুলোকে কেউ উপরদিকে ছিটকে দিচ্ছে। আদিত্য ব্যাগ থেকে বাঁশের বাঁশিটি বের করে বাজাতে আরম্ভ করল ৷    বাঁশির সুর শুনে কারো হৃদয়ে পানবরের মতো ঢেউ খেলেনা এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়৷ বাঁশির সুরের নানা ভঙ্গিমা থাকে। কিছু সুর হৃদয়ক্ষরণ করে আবার কিছু সুর মনের জ্বালা মিটিয়ে বরফগলা  হিমবাহের মতো হৃদয়কে শীতল করে দেয়। রোমাঞ্চকর সুর পাথর হৃদয়েও ভালোবাসার পদ্ম ফুটিয়ে ছাড়ে৷  প্রেমে না  পড়া হৃদয়ও বাঁশির রোমাঞ্চকর সুরে টালমাটাল  হয়ে প্রেমে পড়ার স্বাদ অনুভব করে৷  পরে বুঝতে পারে আসলে সে কখনো প্রেমই করেনি। বাঁশির সুর তাঁর হৃদয়ে কেবলই এক ধরনের রসের সঞ্চার ঘটিয়েছে। হোক হৃদয়বিদারক বা রোমাঞ্চকর দুইই হৃদয়কে নতুন করে আলোরিত করে।  দীনেশচন্দ্র সেন, পল্লিকবি জসীমউদ্দিনের "কবর" কবিতাটি পড়ার পরে তাঁকে চিঠি পাঠান।  চিঠিতে লেখেন,    "দূরবর্তী রাখালের বংশীর মতো তোমার কবিতা আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। তোমার কবিতা পড়ে আমি কেঁদেছি। " বাঁশিতে কতটা মোহ থাকে তা তাঁর উপমাতেই বুঝা যায়। আদিত্য গাছের বাঁকা কাণ্ডে বসে পানিতে পায়ের গোড়ালি ডুবিয়ে বাঁশি বাজাতে আরম্ভ করলো। মনে হচ্ছে থই থই পানি এবং চাঁদটি বাঁশির সুরে টালমাটাল  হয়ে দোল খাচ্ছে।  এর মাঝে পানিতে ছপ্ ছপ্ শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে দিশা করা যাচ্ছেনা কোন দিকে শব্দ হচ্ছে। মনে হচ্ছে বিশালাকৃতির কোনো মাছ তার দিকে ধেয়ে আসছে  ।  মাছটি তাঁর সামনে এসে পানিতে বিশাল একটি ঘূর্ণিপাক দিয়ে তাঁর দেহের দুই তৃতীয়াংশ পানির উপর ভাসিয়ে দিল।  এখন আদিত্য বাঁশি বাজানো থামিয়ে ভালোভাবে লক্ষ্য করল, মাছটির উপরিভাগ মনুষ্য কন্যার মতোই। চাঁদের আলোয় তার চেহারা  স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে৷  সরু নাক, দীর্ঘপল্লব বিশিষ্ট জলমলে আঁখি,  কাঁধ অবধি কোকরানো চুল। সব মিলিয়ে এক অসাধারণ তরুণী । সে আদিত্যকে জিজ্ঞেস করল,   -	কে তুমি?  আদিত্য তাকে পাল্টা প্রশ্ন করে বসে,  -	 তুমি কে?  তরুণী মৃধু হেঁসে জবাব দেয়,  -	আমি মৎস্যকন্যা ।   তার মৃধু হাসিতে যেন হাজারও ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে মুখরিত হয়ে গেল চারপাশ।  আদিত্য বলল,  -	আচ্ছা তুমি তো দেখতে অনেকটা মানুষের মতোই সুকেশী, দুধে আলতা গায়ের রং। তাও তুমি মৎস্যকন্যা!   তরুণীটি মিটমিটিয়ে হাসল। আর বলল,   -	আচ্ছা আদিত্য, তুমি যে একা একা রাতে সাঁতার কাটো ভয় হয়না?    -	সবাই তো আর আমার মতো পাগল নয় যে যখন-তখন, রাত-দুপুরে জলে নেমে সাঁতার কাটবে। হাহাহা। আমি তো সাঁতার না কেটে থাকতে পারিনা। জল  তার তরঙ্গের শব্দের মাধ্যমে আমাকে ডাকে। আমি জলের ডাকে সারা না দিয়ে পারিনা। প্রথম দিকে কিছুটা ভয় হতো । কিন্তু নিজের ভালো লাগার মধ্য দিয়ে যে ইচ্ছা শক্তির জন্ম নিয়েছে তার বলে সকল ভয় দুরিভূত হয়ে গেছে। ও হ্যাঁ, তুমি আমার নাম জানলে কিভাবে?    -	হাহা,থাক নামের   প্রসঙ্গটা বাদ দাও না। জানো,আমিও রাতে একা একা সাঁতার কাটি৷ আমারও সঙ্গী নেই।  বিশেষ করে এই সময়টিতে আমি এই শ্বেতমধু বিলে আসি ৷ জলই এখন আমার ধ্যান-জ্ঞান-আশ্রয়স্থল সব কিছু। জলের নিচে এক অসাধারণ নগরী রয়েছে। স্বচ্ছ  পানিতে তা বেশ ভালোভাবেই দেখা যায় ;তা দেখলে যেকোনো লোকের মনই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ডুবে যায়। বিভিন্ন রকম ছোট বড় অনেক প্রকার ঘাস দেখা যায় জলের নিচে। প্রকৃতি যেন তার আপন হাতে গুছিয়ে জলজ উদ্ভিদের বিশাল অট্টালিকায় জলের নিম্মাঞ্চলকে সাজিয়েছে। এই বিলের মধ্যে রাতেরবেলা কাউকে সাঁতার কাটতে দেখিনি। তোমার মোহন বাঁশির সুরে আমি সেই উত্তরপ্রান্ত থেকে ছুটে এসেছি৷ তোমার বাঁশির সুর যেন আমার হৃদয়ে তোলপার সৃষ্টি করেছে। খুব দ্রুত চঞ্চল বিদ্যুতের মতো সারা শরীর ও মন কে আন্দোলিত করে তুলেছে৷ এখন পূর্ণিমা। চারপাশ আলোকিত। বিলের মধ্যাকার গাছের দিক থেকে বাঁশির সুর ধেয়ে আসছে বলে মনে হলো তাই আমি চলে এলাম তোমার বাঁশির সুর শুনতে। তুমি বাঁশি বাজাও আমি শুনি৷ আমার খুব ভালো লাগে বাঁশির সুর।   আদিত্য বাঁশি বাজাতে আরম্ভ করল আর মৎস্যকন্যা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতে লাগলো। মাঝে মাঝে মৎস্যকন্যাটি তীরবিদ্ধ হরিণীর মতো করূণ দৃষ্টিতে আদিত্যের মুখের দিকে তাকায়।  এখন ফিরে আসার পালা ৷ আদিত্য মৎস্যকন্যার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফিরে আসবে এমন সময় মৎস্যকন্যাটি বলল,  -	চলো পথের সঙ্গী হই।   আদিত্য মনে মনে ভাবলো আমিতো এটিই চেয়েছি। আমার মনের অব্যক্ত কথাগুলো সে কিভাবে বুঝে ফেললো? সে কী দীব্যকর্ণ লাভ করেছে নাকী!  তারপর তাঁরা সাঁতরে তীরের দিকে যাচ্ছে। সাঁতরাচ্ছে আর নানা রকম কথাবার্তায় নিজেদের বিলীন করে দিয়েছে। কখন যে তারা তীরবর্তী এসে পৌঁছালো বুঝতেই পারেনি৷ আদিত্য ডাঙ্গায় উঠে  মৎস্যকন্যাকে ধন্যবাদ ও বিদায় জানাতে পিছন ফিরে তাকাল৷ একি! মৎস্যকন্যা যে নেই? সে কোথায় যেন মিশে গেছে। তার কোনো অস্তিত্বের সন্ধান পাচ্ছেনা আদিত্য। আজ আদিত্যের কিছুই ভালো লাগছেনা৷ অন্যদিন সাঁতার শেষে সে ফুরফুরা মন নিয়ে বাড়ি ফেরে,কিন্তু আজ চিত্রটা ভিন্ন। মনে একরাশ মেঘ নিয়ে বাড়ি ফিরছে সে। আর মনে মনে ভাবতে লাগলো  মৎস্যকন্যার সাথে আবার দেখা হবে তো! নাকী আজই প্রথম আজই শেষ?   কাঁধের ব্যাগের মিষ্টান্ন বের করে ছুড়ে ফেলে দিল। আজ মিষ্টান্ন খাওয়ার কথা মনেই ছিলো না তাঁর৷ থাকবেই বা কিভাবে, চোখের পলক ফেলতেই ভুলে গিয়েছিল আর এতো মিষ্টান্নই।  বাড়ি এসে বিষন্ন মনে শুয়ে পড়ল আদিত্য। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছেনা।   মনে মনে ভাবতে লাগলো,  -	আচ্ছা সে কি আমাকে মনে রাখবে?নাকী ভূলে যাবে? সে কি আমার কথা ভাবছে নাকি আগের মতোই ঘুমিয়ে পরেছে?আচ্ছা, সে মৎস্যকন্যা হওয়ার কি খুব প্রয়োজন ছিলো? "মনুষ্যকন্যা" হলে কি সমস্যা ছিলো? কেন সে মনুষ্য কন্যা হলো না?মনুষ্যকন্যা বা মৎস্যকন্যার যাই হোক না কেনো আমি তাকে খুঁজবো। আবার যাবো সেই শ্বেতমধু বিলে।  পরের দিন আবারও একই স্থানে সাঁতার কাটতে গিয়ে বাঁশি বাজাতে আরম্ভ করল আাদিত্য। কিন্তু আজ মৎস্যকন্যার আগমন ঘটছেনা ৷ তাঁর বিরহে আদিত্যের হৃদয় ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে হৃদয় বিগলিত হয়ে করুণ রসের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। মনে মনে বলতে  লাগলো,  " কেনোই বা দেখা দিলে,  শ্বেত মধু বিলে  তোমারই বিরহে মনে  শান্তি নাহি মিলে। "    মনে হয় মৎস্যকন্যার গতকালের কোনো কথা মনে নেই। হয়তো ভুলে গেছে। হঠাৎ পানিতে শব্দ, আরে মৎস্যকন্যা সাঁতরে আসছে এই গাছের দিকেই৷ এসেই দেহের এক তৃতীয়াংশ পানিতে ডুবন্ত রেখেই একগুচ্ছ সুগন্ধীফুল এগিয়ে দিয়েছে। আদিত্য মহাখুশি ।   আজ আর চাঁদের আলোতে তার মন নেই। থাকবেই বা কেন? সামনে জীবন্ত চাঁদ থাকতে কি আর আকাশের চাঁদের দিকে তাকাতে মন চায়! আদিত্য অনিমেষভাবে মৎস্যকন্যার মুখপানে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণেই সে বলল,  -	চলো আজ মন ভরে সাঁতরে বেড়াই।   এই বলে দুইজন এই বিশাল বিলের মধ্যে বড় মাছের মতো ডানা ঝাপ্টে বেড়াতে শুরু করলো। সামনে একটি কলাগাছের ভেলা দেখতেই দু'জন ধরল এটিকে। আদিত্য মৎস্যকন্যার চাঁদনী  মুখের দিকে তাকাল। তাকে চন্দ্রমুখী বললে বোধহয় ভুল হবেনা৷ আদিত্য তার দিকে তাকিয়ে গুনগুনিয়ে গান ধরল।   মৎস্যকন্যা ধমক দিয়ে বলল,   -	জোরে গান করো। আমি শুনবো না, নাকী? গলা ছেড়ে গান ধরো। গান গেয়ে এই আকাশ-বাতাস-জল সবকিছু মুখরিত করে দাও৷ আমার মনের আকাশের আঁধার কাটিয়ে পূর্ণিমার জ্যোৎস্না এনে দাও।    আদিত্য গলা ছেড়ে গান ধরল,  " তোমারে লেগেছে এত যে ভালো  চাঁদ বুঝি তা জানে..  চাঁদ বুঝি তা জানে৷  রাতের বাসরে ধূসর হয়ে,  তাই সে আমারে টানে..  তাই সে আমারে টানে।  মৎস্যকন্যা মৃধু হাসি হাসলো৷ এই হাসিতে আদিত্য ব্যকুল হয়ে যায়। আদিত্য যেন তার হাসিতে প্রেমের ঘ্রাণ   খুঁজে পায়।  কিন্তু সে তো মানুষ নয় মৎস্যকন্যা। তাহলে কি করেই বা সে প্রেমের আবেদনটা জানাবে? হয়তো আর কোনো দিন দেখাই মিলবেনা তার সাথে। হয়তো একদিন সে চলে যাবে এই বিল ছেড়ে অন্য কোনো নদীতে কিংবা সাগরের অতল গহ্বরে। কিন্তু তার হাসিতে তো আদিত্য প্রেমের আবেদন উপলব্ধি করতে পারে। জোছনা বিলাসের পর তারা যার যার মতো  ফিরে গেল। আর দেখা মিললনা তাদের।   এই বিল যখন শুকিয়ে যায় তখন এখানে এক গ্রাম্য মেলা বসে৷ দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন আসে এ মেলায়। রেশমি চুড়ি,জিনুকের মালা আরও কতকি বিক্রি হয় এ মেলায় ।এ মেলা তিনদিনব্যাপী হয়ে থাকে।মেলার শেষদিন আদিত্য মেলায় গেল ।মেলাতে ঘুরে ঘুরে  নানা রকম আয়োজন দেখতে লাগলো। এদিকে বিকেল গিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। দোকানীরা মশাল ও পাম্প-লাইট জ্বেলে দোকান আলোকিত করতে ব্যস্ত । আদিত্য সেই মৎস্যকন্যার কথা ভেবে ভেবে রেশমি চুড়ি,ঝিনুকের মালা ও কাকরা দেখতে লাগলো।  হটাৎ কিছু বুঝে উঠার আগেই আদিত্যের পাঞ্জাবি ধরে কে যেন আচমকা টান দিয়ে দোকানের পিছনে নিয়ে গেল । আরে! এই দোকানের পিছনেই যে সেই আম গাছটি। মেলার জিনিসপত্রের দিকে মনোনিবেশ করে কখন যে এই গাছের নিকটে চলে এলো বুঝতেই পারেনি আদিত্য। কিন্তু পিছন দিক থেকে আচমকা টেনে আনলো কে?  কাউকে তো দেখা যাচ্ছে না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে অন্ধকারের চাদরে ছড়িয়ে পরেছে চারপাশে ৷ দোকানের আলোর কাছ থেকে হঠাৎ অন্ধকারে আসাতে চারপাশ তুলনামূলকভাবে কয়েকগুন বেশি অন্ধকার মনে হচ্ছে আদিত্যের কাছে।    আদিত্য উচ্চ স্বরে বলল,  -	কে আমাকে টেনে আনলে? এখন লুকিয়ে আছো কেনো? কে তুমি?  মনে মনে ভয়ও পাচ্ছিল। কোনো ভূত নয়তো!  হটাৎ দেখতে পেল গাছটির পিছনে সামান্য আলো জ্বলে উঠলো। গাছটির পিছন থেকে একটি জ্বলন্ত মোমবাতি হাতে নিয়ে সুকেশী,সুশ্রী এক তরুণী উজ্জ্বল নীল রঙের শাড়ি পড়ে সমতালে আলতোভাবে হেঁটে আসছে তার দিকে৷ মোমবাতির আন্দোলিত আলোয় তার চেহারা অনেকটা রক্তিম সৌন্দর্যমন্ডিত কোনোদিন পরী মনে হচ্ছে। তরুনীর চেহারা কিছুটা পরিচিতও মনে হচ্ছে আদিত্যের কাছে। কাছে এসেই এক হাতে মোমবাতি ধরে আরেক হাত দিয়ে আদিত্যের পাঞ্জাবির গলা ধরে এক টানে  তার  মুখমন্ডল বরাবর নিয়ে চোখে চোখ রেখে তাকাল ৷ এদিকে মোমবাতির আন্দোলিত আলো জ্বলেই চলছে। এই আলোতে তার মুখটি নবপূর্ণিমার চাঁদ মনে হচ্ছে।  তার চেহারায় এত আবেগ, এত মায়া,এত মমতা, এত স্নীগ্ধতা যে, আদিত্য  কয়েকমূহুর্তের জন্যে নিজের অজান্তেই  হারিয়ে গেল তার রূপসাগরে৷ তরুনীটি আরেকটা টান দিয়ে আরও কাছে নিয়ে আদিত্যের কানে কানে ফিস্ ফিস্ করে বলতে লাগলো,  -	এত তাড়াতাড়িই তোমার মৎস্যকন্যাকে ভুলে গেলা! ভালোবাস তো!”   আদিত্যের হৃদয়ে পরম সুখের জোয়ার নেমে আসলো, নদীর স্রোতের মতো মনে সুখ বইতে আরম্ভ করল। কারণ, আদিত্য যে তাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসেছিল। এখনো ভালোবাসে এবং সারাজীবন ভালোবেসে যেতে চায়। যেমনভাবে পানেরবরে আচমকা বাতাসে সকল পানপাতাগুলি আন্দোলিত করে তেমনিভাবে এত দিন পরে  তরুনীর কণ্ঠনিঃসৃত ধ্বনি আদিত্যেরর মনে পরমসুখ আন্দোলিত করছে।নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলনা আদিত্য। কারণ, শাড়িতে তাকে অন্যরকম লাগছে। কোনো খুঁত নেই খাঁটি মনুষ্যকন্যা৷ আদিত্য জিজ্ঞেস করল,   -	তুমি তো মৎস্যকন্যা। কিন্তু এখন পুরোপুরি মানুষ! কীভাবে সম্ভব?  সে বলল,  -	আমি মৎস্যকন্যা নই। আমি সাঁতারকাটতে ভালোবাসি, জলকে ভালোবাসি। মাছের মতো পানিতে সারাদিন সাঁতার কাটতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু তা দিনেরবেলা সম্ভব হয়না। তাই প্রায়ই এই বিলে রাত্রিতে কৃত্রিম মৎসকন্যা হয়ে চলাফেরা করি, সাঁতার কাটি। ওই যে জেলেপাড়া দেখা যাচ্ছে। সেখানেই আমি থাকি ।  এগুলো শুনে কেনো যেন আদিত্যের সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে। যাকে মানুষ হিসেবে দেখতে চেয়েছিল সে আসলেই মানুষ! তার হাতটি ধরে চোখে চোখ রেখে আদিত্য বলল,  -	হুম, ভালোবাসি তো। ভালোবেসে যাবো সবসময়।  আমরা এখন থেকে খুব করে সাঁতরাবো, শুক্লপক্ষের কোনো তিথি বাদ যাবেনা, এক সাথে সাঁতরে বেড়াবো। বৃষ্টিতে ভিজবো,রোদে জ্বলে পুড়বো,আঁধারে ডুবে যাবো। চন্দ্রের আলো গায়ে মাখবো, সাথী হয়ে ঘুরবো,ফিরবো,চলবো।  তবুও ভালোবাসবো। ভালোবাসতে বাসতে জীবন বিলীন করে দিব। তবুও ভালোবাসব। তোমার সুদীর্ঘ পল্লববিশিষ্ট আঁখিতে অপলক তাকিয়ে থাকবো। তাকিয়ে থাকতে থাকতে দৃষ্টিহীন হয়ে গেলেও অন্তঃদৃষ্টিতে তোমার ওই চন্দ্রমুখে তাকিয়ে থাকব, তবুও ভালোবাসবো, তোমাকেই ভালোবাসবো...  আচ্ছা, তোমার নাম তো কোনোদিন  বললে না?  -	হাহাহা, সেটা না হয় না বলাই থাক। তুমি নিজের মতো করে আমার নাম জেনে নিও। ততদিন না হয় তোমার কাছে আমি চন্দ্রমুখী মৎস্যকন্যা হয়েই থাকি...      আরও লেখা পড়তে নীল লেখাতে ক্লিক করুনঃ  ১."জোনাকির মুক্তি" গল্প  ২.স্টেশনের কান্না  ৩. জীবনের উত্থান-পতন  ৪.মনের ভয় নাকি ভুতের ভয়  ৪.ফোকলোর পরিচিতি
Original photo collected from internet


"জোনাকির মুক্তি" গল্পটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সাঁতার যেন তার প্রতিটি রক্তকণিকায় মিশে গেছে৷ একদিন সাঁতার না কাটলে সে সুস্থতা অনুভব করে না, স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেনা। শরীর মন দু'ই  নিস্তেজ হয়ে পরে। সাঁতার যেন তাকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছে। জলরাশি যেন প্রতিনিয়ত তাকে ডাকে ।  চাঁদের আলো গায়ে মেখে সবাই হাঁটতে পারে। কিন্তু সাঁতার কাটতে পারে কতজন ? অমাবস্যায় হাতে হারিকেন নিয়ে নদী,বিল বা পুকুর পাড়ে বসে পদযুগল  ভিজিয়ে পানিতে খেলা করতে  পারে ক'জন? প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য   উপভোগের বিষয় নয় কী?  চাঁদের আলো পেলে আদিত্য ঘরে বসে থাকতে পারেনা। সে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। সে রাস্তায় একা হাঁটে এবং জ্যোৎস্না কুড়ায়৷ সবশেষে প্রকৃতি নীরব হতে থাকলে নাইট আউলের বদলে "নাইট ফিশ" হয়ে সে পানিতে নেমে পরে।

এখন বর্ষাকাল। চার পাশ নতুন পানিতে থই থই।  বাড়ি থেকে হেঁটে মিনিট দশেক দূরের রাস্তা পার হলেই বিশাল বিল। বিলের নাম "স্বেতমধু বিল"।  স্বেতমধু বিলের মাঝখানে  খানিকটা উঁচু জায়গা আছে৷ এখানে পুরোনো একটি বাঁকা আম গাছ রয়েছে। বর্ষা ছাড়া অন্য সময়ে অনেকে এই গাছে উঠে বসে ঠান্ডা বাতাস গায়ে মেখে শীতলতা অনুভব করে।  বর্ষাকালে পুরো বিল পানিতে থই থই করে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।  স্বেতমধু বিল কানায় কানায় পূর্ণতা লাভ করেছে। এই বিলের পানিতে নেই কোনো আবর্জনা, নেই কোনো উষ্ক লতাপাতা । তাই হয়তো এর নাম " স্বেত মধু বিল" রাখা হয়েছে ৷ আদিত্য  চাঁদের আলো পেয়েই সাঁতার কাটার উদ্দেশ্যে "শ্বেত মধু " বিলের ধারে পৌঁছালো। সাথে কেউ নেই,  সে একা ৷  অবশ্য রাতে সে একা একাই  সাঁতার কাটে ৷ সাথী কাউকে পায় না। পাবেই বা কেন? সবাই তো আর তাঁর মতো পাগল নয় যে রাত-দুপুরে  যখন-তখন সাঁতার কাটতে যাবে। যাই হোক, আদিত্য সাঁতার কাটতে পানিতে নামবে এমন সময় মনে হলো তার কাঁধে পলিথিনের ব্যাগটি নেই৷  আশেপাশে খোঁজতে আরম্ভ করলো। অবশেষে খোঁজে পেল।  এটি মাটিতে পড়ে আছে।  ব্যাগটিতে একটি বাঁশের বাঁশি, একটি ছোট্ট টর্চলাইট এবং গুটিকয়েক সুগ্রাণ সম্বলিত মিষ্টান্ন। ব্যাগটি কাঁধে বেঁধে  বিলে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতারকাটা শুরু করল।  পানিতে ছপ্ ছপ্ শব্দ হচ্ছে শুধু। নিজেকে "নাইট ফিশ" ভেবে দু'হাত ঝাপটে ধাপিয়ে বেড়াচ্ছে৷  বাস্তবিকে "নাইট ফিশ" বলে কিছু আছে নাকী সে তা জানে না৷ না থাক, সেই না হয় প্রথম "নাইট ফিশ" হলো। আকাশের চাঁদটিও মজার ছলে আদিত্যের সাথে পাল্লা দিয়ে খেলা করছে। সে যে দিকে যাচ্ছে চাঁদটিও সেদিকেই যাচ্ছে৷  মানুষজন নেই তো কি হয়েছে? অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী চাঁদ তো ঠিকই তার সঙ্গী হয়েছে৷ চাঁদের আলোতে যেন সব কিছুই রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছে।

সাঁতার কাটতে কাটতে সে মাঝবিলের সেই চিরচেনা বাঁকা আম  গাছটির কাছে পৌঁছালো।  গাছটি একটু উঁচু জায়গায় ছিল বলে গোড়ার শিকড়গুলো থেকে এক হাত উপর  পর্যন্ত পানিতে ডুবে আছে নতুবা আরও অনেক অংশই ডুবে যেতো।  সে গাছে উঠে বসে বিলের চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলো। মাছের জাঁক লাফালাফি করছে। চাঁদের আলোয় মনে হচ্ছে, যেন রুপার চিরল খন্ডগুলোকে কেউ উপরদিকে ছিটকে দিচ্ছে। আদিত্য ব্যাগ থেকে বাঁশের বাঁশিটি বের করে বাজাতে আরম্ভ করল ৷


বাঁশির সুর শুনে কারো হৃদয়ে পানবরের মতো ঢেউ খেলেনা এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়৷ বাঁশির সুরের নানা ভঙ্গিমা থাকে। কিছু সুর হৃদয়ক্ষরণ করে আবার কিছু সুর মনের জ্বালা মিটিয়ে বরফগলা  হিমবাহের মতো হৃদয়কে শীতল করে দেয়। রোমাঞ্চকর সুর পাথর হৃদয়েও ভালোবাসার পদ্ম ফুটিয়ে ছাড়ে৷  প্রেমে না  পড়া হৃদয়ও বাঁশির রোমাঞ্চকর সুরে টালমাটাল  হয়ে প্রেমে পড়ার স্বাদ অনুভব করে৷  পরে বুঝতে পারে আসলে সে কখনো প্রেমই করেনি। বাঁশির সুর তাঁর হৃদয়ে কেবলই এক ধরনের রসের সঞ্চার ঘটিয়েছে। হোক হৃদয়বিদারক বা রোমাঞ্চকর দুইই হৃদয়কে নতুন করে আলোরিত করে।

দীনেশচন্দ্র সেন, পল্লিকবি জসীমউদ্দিনের "কবর" কবিতাটি পড়ার পরে তাঁকে চিঠি পাঠান।  চিঠিতে লেখেন,  

"দূরবর্তী রাখালের বংশীর মতো তোমার কবিতা আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। তোমার কবিতা পড়ে আমি কেঁদেছি। " বাঁশিতে কতটা মোহ থাকে তা তাঁর উপমাতেই বুঝা যায়। আদিত্য গাছের বাঁকা কাণ্ডে বসে পানিতে পায়ের গোড়ালি ডুবিয়ে বাঁশি বাজাতে আরম্ভ করলো। মনে হচ্ছে থই থই পানি এবং চাঁদটি বাঁশির সুরে টালমাটাল  হয়ে দোল খাচ্ছে।  এর মাঝে পানিতে ছপ্ ছপ্ শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে দিশা করা যাচ্ছেনা কোন দিকে শব্দ হচ্ছে। মনে হচ্ছে বিশালাকৃতির কোনো মাছ তার দিকে ধেয়ে আসছে  ।  মাছটি তাঁর সামনে এসে পানিতে বিশাল একটি ঘূর্ণিপাক দিয়ে তাঁর দেহের দুই তৃতীয়াংশ পানির উপর ভাসিয়ে দিল।  এখন আদিত্য বাঁশি বাজানো থামিয়ে ভালোভাবে লক্ষ্য করল, মাছটির উপরিভাগ মনুষ্য কন্যার মতোই। চাঁদের আলোয় তার চেহারা  স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে৷  সরু নাক, দীর্ঘপল্লব বিশিষ্ট জলমলে আঁখি,  কাঁধ অবধি কোকরানো চুল। সব মিলিয়ে এক অসাধারণ তরুণী । সে আদিত্যকে জিজ্ঞেস করল, 

- কে তুমি?

আদিত্য তাকে পাল্টা প্রশ্ন করে বসে,

- তুমি কে?

তরুণী মৃধু হেঁসে জবাব দেয়,

- আমি মৎস্যকন্যা । 

তার মৃধু হাসিতে যেন হাজারও ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে মুখরিত হয়ে গেল চারপাশ।

আদিত্য বলল,

- আচ্ছা তুমি তো দেখতে অনেকটা মানুষের মতোই সুকেশী, দুধে আলতা গায়ের রং। তাও তুমি মৎস্যকন্যা! 

তরুণীটি মিটমিটিয়ে হাসল। আর বলল, 

- আচ্ছা আদিত্য, তুমি যে একা একা রাতে সাঁতার কাটো ভয় হয়না?


- সবাই তো আর আমার মতো পাগল নয় যে যখন-তখন, রাত-দুপুরে জলে নেমে সাঁতার কাটবে। হাহাহা। আমি তো সাঁতার না কেটে থাকতে পারিনা। জল  তার তরঙ্গের শব্দের মাধ্যমে আমাকে ডাকে। আমি জলের ডাকে সারা না দিয়ে পারিনা। প্রথম দিকে কিছুটা ভয় হতো । কিন্তু নিজের ভালো লাগার মধ্য দিয়ে যে ইচ্ছা শক্তির জন্ম নিয়েছে তার বলে সকল ভয় দুরিভূত হয়ে গেছে। ও হ্যাঁ, তুমি আমার নাম জানলে কিভাবে?


- হাহা,থাক নামের   প্রসঙ্গটা বাদ দাও না। জানো,আমিও রাতে একা একা সাঁতার কাটি৷ আমারও সঙ্গী নেই।  বিশেষ করে এই সময়টিতে আমি এই শ্বেতমধু বিলে আসি ৷ জলই এখন আমার ধ্যান-জ্ঞান-আশ্রয়স্থল সব কিছু। জলের নিচে এক অসাধারণ নগরী রয়েছে। স্বচ্ছ  পানিতে তা বেশ ভালোভাবেই দেখা যায় ;তা দেখলে যেকোনো লোকের মনই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ডুবে যায়। বিভিন্ন রকম ছোট বড় অনেক প্রকার ঘাস দেখা যায় জলের নিচে। প্রকৃতি যেন তার আপন হাতে গুছিয়ে জলজ উদ্ভিদের বিশাল অট্টালিকায় জলের নিম্মাঞ্চলকে সাজিয়েছে। এই বিলের মধ্যে রাতেরবেলা কাউকে সাঁতার কাটতে দেখিনি। তোমার মোহন বাঁশির সুরে আমি সেই উত্তরপ্রান্ত থেকে ছুটে এসেছি৷ তোমার বাঁশির সুর যেন আমার হৃদয়ে তোলপার সৃষ্টি করেছে। খুব দ্রুত চঞ্চল বিদ্যুতের মতো সারা শরীর ও মন কে আন্দোলিত করে তুলেছে৷ এখন পূর্ণিমা। চারপাশ আলোকিত। বিলের মধ্যাকার গাছের দিক থেকে বাঁশির সুর ধেয়ে আসছে বলে মনে হলো তাই আমি চলে এলাম তোমার বাঁশির সুর শুনতে। তুমি বাঁশি বাজাও আমি শুনি৷ আমার খুব ভালো লাগে বাঁশির সুর। 

আদিত্য বাঁশি বাজাতে আরম্ভ করল আর মৎস্যকন্যা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতে লাগলো। মাঝে মাঝে মৎস্যকন্যাটি তীরবিদ্ধ হরিণীর মতো করূণ দৃষ্টিতে আদিত্যের মুখের দিকে তাকায়।

এখন ফিরে আসার পালা ৷ আদিত্য মৎস্যকন্যার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফিরে আসবে এমন সময় মৎস্যকন্যাটি বলল,

- চলো পথের সঙ্গী হই। 

আদিত্য মনে মনে ভাবলো আমিতো এটিই চেয়েছি। আমার মনের অব্যক্ত কথাগুলো সে কিভাবে বুঝে ফেললো? সে কী দীব্যকর্ণ লাভ করেছে নাকী!

তারপর তাঁরা সাঁতরে তীরের দিকে যাচ্ছে। সাঁতরাচ্ছে আর নানা রকম কথাবার্তায় নিজেদের বিলীন করে দিয়েছে। কখন যে তারা তীরবর্তী এসে পৌঁছালো বুঝতেই পারেনি৷ আদিত্য ডাঙ্গায় উঠে  মৎস্যকন্যাকে ধন্যবাদ ও বিদায় জানাতে পিছন ফিরে তাকাল৷ একি! মৎস্যকন্যা যে নেই? সে কোথায় যেন মিশে গেছে। তার কোনো অস্তিত্বের সন্ধান পাচ্ছেনা আদিত্য। আজ আদিত্যের কিছুই ভালো লাগছেনা৷ অন্যদিন সাঁতার শেষে সে ফুরফুরা মন নিয়ে বাড়ি ফেরে,কিন্তু আজ চিত্রটা ভিন্ন। মনে একরাশ মেঘ নিয়ে বাড়ি ফিরছে সে। আর মনে মনে ভাবতে লাগলো  মৎস্যকন্যার সাথে আবার দেখা হবে তো! নাকী আজই প্রথম আজই শেষ? 

কাঁধের ব্যাগের মিষ্টান্ন বের করে ছুড়ে ফেলে দিল। আজ মিষ্টান্ন খাওয়ার কথা মনেই ছিলো না তাঁর৷ থাকবেই বা কিভাবে, চোখের পলক ফেলতেই ভুলে গিয়েছিল আর এতো মিষ্টান্নই।  বাড়ি এসে বিষন্ন মনে শুয়ে পড়ল আদিত্য। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছেনা। 

মনে মনে ভাবতে লাগলো,

- আচ্ছা সে কি আমাকে মনে রাখবে?নাকী ভূলে যাবে? সে কি আমার কথা ভাবছে নাকি আগের মতোই ঘুমিয়ে পরেছে?আচ্ছা, সে মৎস্যকন্যা হওয়ার কি খুব প্রয়োজন ছিলো? "মনুষ্যকন্যা" হলে কি সমস্যা ছিলো? কেন সে মনুষ্য কন্যা হলো না?মনুষ্যকন্যা বা মৎস্যকন্যার যাই হোক না কেনো আমি তাকে খুঁজবো। আবার যাবো সেই শ্বেতমধু বিলে।

পরের দিন আবারও একই স্থানে সাঁতার কাটতে গিয়ে বাঁশি বাজাতে আরম্ভ করল আাদিত্য। কিন্তু আজ মৎস্যকন্যার আগমন ঘটছেনা ৷ তাঁর বিরহে আদিত্যের হৃদয় ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে হৃদয় বিগলিত হয়ে করুণ রসের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। মনে মনে বলতে  লাগলো,

" কেনোই বা দেখা দিলে,

শ্বেত মধু বিলে

তোমারই বিরহে মনে

শান্তি নাহি মিলে। "


মনে হয় মৎস্যকন্যার গতকালের কোনো কথা মনে নেই। হয়তো ভুলে গেছে। হঠাৎ পানিতে শব্দ, আরে মৎস্যকন্যা সাঁতরে আসছে এই গাছের দিকেই৷ এসেই দেহের এক তৃতীয়াংশ পানিতে ডুবন্ত রেখেই একগুচ্ছ সুগন্ধীফুল এগিয়ে দিয়েছে। আদিত্য মহাখুশি । 

আজ আর চাঁদের আলোতে তার মন নেই। থাকবেই বা কেন? সামনে জীবন্ত চাঁদ থাকতে কি আর আকাশের চাঁদের দিকে তাকাতে মন চায়! আদিত্য অনিমেষভাবে মৎস্যকন্যার মুখপানে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণেই সে বলল,

- চলো আজ মন ভরে সাঁতরে বেড়াই। 

এই বলে দুইজন এই বিশাল বিলের মধ্যে বড় মাছের মতো ডানা ঝাপ্টে বেড়াতে শুরু করলো। সামনে একটি কলাগাছের ভেলা দেখতেই দু'জন ধরল এটিকে। আদিত্য মৎস্যকন্যার চাঁদনী  মুখের দিকে তাকাল। তাকে চন্দ্রমুখী বললে বোধহয় ভুল হবেনা৷ আদিত্য তার দিকে তাকিয়ে গুনগুনিয়ে গান ধরল। 

মৎস্যকন্যা ধমক দিয়ে বলল, 

- জোরে গান করো। আমি শুনবো না, নাকী? গলা ছেড়ে গান ধরো। গান গেয়ে এই আকাশ-বাতাস-জল সবকিছু মুখরিত করে দাও৷ আমার মনের আকাশের আঁধার কাটিয়ে পূর্ণিমার জ্যোৎস্না এনে দাও। 

 আদিত্য গলা ছেড়ে গান ধরল,

" তোমারে লেগেছে এত যে ভালো

চাঁদ বুঝি তা জানে..

চাঁদ বুঝি তা জানে৷

রাতের বাসরে ধূসর হয়ে,

তাই সে আমারে টানে..

তাই সে আমারে টানে।

মৎস্যকন্যা মৃধু হাসি হাসলো৷ এই হাসিতে আদিত্য ব্যকুল হয়ে যায়। আদিত্য যেন তার হাসিতে প্রেমের ঘ্রাণ   খুঁজে পায়।  কিন্তু সে তো মানুষ নয় মৎস্যকন্যা। তাহলে কি করেই বা সে প্রেমের আবেদনটা জানাবে? হয়তো আর কোনো দিন দেখাই মিলবেনা তার সাথে। হয়তো একদিন সে চলে যাবে এই বিল ছেড়ে অন্য কোনো নদীতে কিংবা সাগরের অতল গহ্বরে। কিন্তু তার হাসিতে তো আদিত্য প্রেমের আবেদন উপলব্ধি করতে পারে। জোছনা বিলাসের পর তারা যার যার মতো  ফিরে গেল। আর দেখা মিললনা তাদের। 

এই বিল যখন শুকিয়ে যায় তখন এখানে এক গ্রাম্য মেলা বসে৷ দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন আসে এ মেলায়। রেশমি চুড়ি,জিনুকের মালা আরও কতকি বিক্রি হয় এ মেলায় ।এ মেলা তিনদিনব্যাপী হয়ে থাকে।মেলার শেষদিন আদিত্য মেলায় গেল ।মেলাতে ঘুরে ঘুরে  নানা রকম আয়োজন দেখতে লাগলো। এদিকে বিকেল গিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। দোকানীরা মশাল ও পাম্প-লাইট জ্বেলে দোকান আলোকিত করতে ব্যস্ত । আদিত্য সেই মৎস্যকন্যার কথা ভেবে ভেবে রেশমি চুড়ি,ঝিনুকের মালা ও কাকরা দেখতে লাগলো।  হটাৎ কিছু বুঝে উঠার আগেই আদিত্যের পাঞ্জাবি ধরে কে যেন আচমকা টান দিয়ে দোকানের পিছনে নিয়ে গেল । আরে! এই দোকানের পিছনেই যে সেই আম গাছটি। মেলার জিনিসপত্রের দিকে মনোনিবেশ করে কখন যে এই গাছের নিকটে চলে এলো বুঝতেই পারেনি আদিত্য। কিন্তু পিছন দিক থেকে আচমকা টেনে আনলো কে?  কাউকে তো দেখা যাচ্ছে না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে অন্ধকারের চাদরে ছড়িয়ে পরেছে চারপাশে ৷ দোকানের আলোর কাছ থেকে হঠাৎ অন্ধকারে আসাতে চারপাশ তুলনামূলকভাবে কয়েকগুন বেশি অন্ধকার মনে হচ্ছে আদিত্যের কাছে।  

আদিত্য উচ্চ স্বরে বলল,

- কে আমাকে টেনে আনলে? এখন লুকিয়ে আছো কেনো? কে তুমি?

মনে মনে ভয়ও পাচ্ছিল। কোনো ভূত নয়তো!

হটাৎ দেখতে পেল গাছটির পিছনে সামান্য আলো জ্বলে উঠলো। গাছটির পিছন থেকে একটি জ্বলন্ত মোমবাতি হাতে নিয়ে সুকেশী,সুশ্রী এক তরুণী উজ্জ্বল নীল রঙের শাড়ি পড়ে সমতালে আলতোভাবে হেঁটে আসছে তার দিকে৷ মোমবাতির আন্দোলিত আলোয় তার চেহারা অনেকটা রক্তিম সৌন্দর্যমন্ডিত কোনোদিন পরী মনে হচ্ছে। তরুনীর চেহারা কিছুটা পরিচিতও মনে হচ্ছে আদিত্যের কাছে। কাছে এসেই এক হাতে মোমবাতি ধরে আরেক হাত দিয়ে আদিত্যের পাঞ্জাবির গলা ধরে এক টানে  তার  মুখমন্ডল বরাবর নিয়ে চোখে চোখ রেখে তাকাল ৷ এদিকে মোমবাতির আন্দোলিত আলো জ্বলেই চলছে। এই আলোতে তার মুখটি নবপূর্ণিমার চাঁদ মনে হচ্ছে।  তার চেহারায় এত আবেগ, এত মায়া,এত মমতা, এত স্নীগ্ধতা যে, আদিত্য  কয়েকমূহুর্তের জন্যে নিজের অজান্তেই  হারিয়ে গেল তার রূপসাগরে৷ তরুনীটি আরেকটা টান দিয়ে আরও কাছে নিয়ে আদিত্যের কানে কানে ফিস্ ফিস্ করে বলতে লাগলো,

- এত তাড়াতাড়িই তোমার মৎস্যকন্যাকে ভুলে গেলা! ভালোবাস তো!” 

আদিত্যের হৃদয়ে পরম সুখের জোয়ার নেমে আসলো, নদীর স্রোতের মতো মনে সুখ বইতে আরম্ভ করল। কারণ, আদিত্য যে তাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসেছিল। এখনো ভালোবাসে এবং সারাজীবন ভালোবেসে যেতে চায়। যেমনভাবে পানেরবরে আচমকা বাতাসে সকল পানপাতাগুলি আন্দোলিত করে তেমনিভাবে এত দিন পরে  তরুনীর কণ্ঠনিঃসৃত ধ্বনি আদিত্যেরর মনে পরমসুখ আন্দোলিত করছে।নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলনা আদিত্য। কারণ, শাড়িতে তাকে অন্যরকম লাগছে। কোনো খুঁত নেই খাঁটি মনুষ্যকন্যা৷ আদিত্য জিজ্ঞেস করল, 

- তুমি তো মৎস্যকন্যা। কিন্তু এখন পুরোপুরি মানুষ! কীভাবে সম্ভব?

সে বলল,

- আমি মৎস্যকন্যা নই। আমি সাঁতারকাটতে ভালোবাসি, জলকে ভালোবাসি। মাছের মতো পানিতে সারাদিন সাঁতার কাটতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু তা দিনেরবেলা সম্ভব হয়না। তাই প্রায়ই এই বিলে রাত্রিতে কৃত্রিম মৎসকন্যা হয়ে চলাফেরা করি, সাঁতার কাটি। ওই যে জেলেপাড়া দেখা যাচ্ছে। সেখানেই আমি থাকি ।

এগুলো শুনে কেনো যেন আদিত্যের সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে। যাকে মানুষ হিসেবে দেখতে চেয়েছিল সে আসলেই মানুষ! তার হাতটি ধরে চোখে চোখ রেখে আদিত্য বলল,

- হুম, ভালোবাসি তো। ভালোবেসে যাবো সবসময়।  আমরা এখন থেকে খুব করে সাঁতরাবো, শুক্লপক্ষের কোনো তিথি বাদ যাবেনা, এক সাথে সাঁতরে বেড়াবো। বৃষ্টিতে ভিজবো,রোদে জ্বলে পুড়বো,আঁধারে ডুবে যাবো। চন্দ্রের আলো গায়ে মাখবো, সাথী হয়ে ঘুরবো,ফিরবো,চলবো।  তবুও ভালোবাসবো। ভালোবাসতে বাসতে জীবন বিলীন করে দিব। তবুও ভালোবাসব। তোমার সুদীর্ঘ পল্লববিশিষ্ট আঁখিতে অপলক তাকিয়ে থাকবো। তাকিয়ে থাকতে থাকতে দৃষ্টিহীন হয়ে গেলেও অন্তঃদৃষ্টিতে তোমার ওই চন্দ্রমুখে তাকিয়ে থাকব, তবুও ভালোবাসবো, তোমাকেই ভালোবাসবো...

আচ্ছা, তোমার নাম তো কোনোদিন  বললে না?

- হাহাহা, সেটা না হয় না বলাই থাক। তুমি নিজের মতো করে আমার নাম জেনে নিও। ততদিন না হয় তোমার কাছে আমি চন্দ্রমুখী মৎস্যকন্যা হয়েই থাকি...



আরও লেখা পড়তে নীল লেখাতে ক্লিক করুনঃ

১."জোনাকির মুক্তি" গল্প

২.স্টেশনের কান্না

৩. জীবনের উত্থান-পতন

৪.মনের ভয় নাকি ভুতের ভয়

৪.ফোকলোর পরিচিতি


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url