স্টেশনের কান্না
স্টেশনের কান্না
কি অবাক হয়ে গেলেন? ভাবছেন স্টেশন কিভাবে কান্না করে????
তবে চলুন জেনে নেই আসল রহস্য । " শিহাব" সবে মাত্র কলেজে ভর্তি হলো। সে যে জায়গায় থাকে সেখান থেকে কলেজে হেটে যেতে মাত্র ৭-৮ মিনিট সময় লাগে। আর অটো রিক্সা দিয়ে যেতে কখনও ৫ টাকা কখনও ১০ টাকা ভাড়া লাগে। কলেজের সাথেই আছে রেল স্টেশন । কলেজ ছুটির পর তাঁর হাতে অটো রিক্সা ভাড়া থাকা সত্যেও প্রায় সময়ই হেঁটে হেঁটে বাসায় যায়। কলেজ ছুটির পর আমি আর শিহাব একসাথেই বের হলাম। শিহাব বললো চল রেলস্টেশনে যাই। জিজ্ঞেস করলাম, কেনো রে? কি কোনো দরকার রেলস্টেশনে?
এই দুপুরে কি কাজ থাকতে পারে তর?হুম???
শিহাবঃ দোস্ত অনেক দরকার চলনা যাই।
আমিঃ ঠিকাছে চল।
স্টেশনে যাওয়ার পর দেখলাম সবাই কত ব্যস্ত। কেউ টিকেট কাটছে। কেউবা ট্রেনে লাফিয়ে উঠছে৷ ট্রেন তার আপন গতিতে ছুটে চলছে । খুবই কোলাহলপূর্ণ একটি জায়গা স্টেশন । কিছুক্ষন থাকলেই মাথাধরা শুরু হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যায়। আমি আশেপাশের মানুষগুলিকে দেখতে লাগলাম। বিভিন্ন এলাকার মানুষের ভীর এখানে৷ বিভিন্ন রকম তাঁদের কথা বলার ধরণ৷ বিভিন্ন রকম তাঁদের চালচলন । আমি বললাম শিহাব, তুই এই কোলাহলপু্র্ণ জায়গায় কেনো নিয়ে আসলি বলতো। কোনো জাবাব না পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি শিহাব আমার সাথে নেই৷ সে খানিকটা দুরে একটি বয়স্ক মহিলার সাথে কথা বলছে। আমিও গেলাম সেখানে। গিয়ে দেখলাম মহিলাটির ২টি পা নেই। মহিলাটি ভিক্ষে করছে। শিহাব কিছু টাকা দিলো মহিলাটিকে৷
আরেকটু সামনে যেতেই আরেকজন লোককে দেখতে পেলাম যার একটি চোখ ও ভালো না। সে জন্ম থেকেই অন্ধ। আমরা যারা পৃথিবীর আলো দেখতে পাচ্ছি, তারা কতইনা ভাগ্যবান। তাইনা?
অন্ধ লোকটি মানুষের কাছে হাত পেতে সাহায্য চায়। কেউ দেয় কেউবা দেয়না। শিহাব তাকেও কিছু টাকা দিলো৷
এখন শিহাব বললো চল বাসায় যাই। এই বলে ২জন হেটে হেটে বাসায় যাওয়া শুরু করলাম। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম তোকে কলেজ ছুটির পর খোঁজে পাওয়া যায় না। তুই কি কলেজ ছুটি হওয়ার পর প্রতিদিন স্টেশনে আসিস????
শিহাবঃ হ্যাঁ, বিশেষ করে যেদিন আমার মন খারাপ থাকে সেদিন আমি স্টেশনে আসি। যখন স্টেশনে আসি তখন আমি বিভিন্ন রকম লোক দেখতে পাই। আমি দেখি কারও হাত নেই,কারও পা নেই, কারও চোখ নেই । আবার কেউবা ক্যান্সারে আক্রান্ত। ৮০-৮৫ বছরের বৃদ্ধা মহিলাকেও দেখি পেটে ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়ে জীর্ণ শীর্ণ হয়ে স্টেশনের কোনো একটু জায়গায় শুয়ে থাকতে । তাঁর চোখের দিকে তাকানো যায়না। চোখের দিকে তাকালে মনে হয় তাঁর চোখ টলমল হয়ে আছে চোখের পানিতে। সে তাঁর চোখের ভাষায় বুঝাতে চায়, হায় রে নিষ্ঠোর পৃথিবী। আজ না খেয়ে শুয়ে আছি৷ কেউ একবার জিজ্ঞেসও করেনা খেয়েছি কিনা৷ ২ টাকা চাইতে গিয়া হাজারবার বাবা ডাকলেও পাওয়া যায় না৷ বিধাতা কেনো আমাদের এরূপ করেছেন ? বিধাতার কাছেতো কোনো কিছুর অভাব নেই। তাহলে কেনো তিনি আমাদের বেলায় এত কৃপণ? তিনি কেনোইবা এই যন্ত্রনা দায়ক জীবন দিয়েছে? এর থেকে বরং মৃত্যু দিয়ে পৃথিবী থেকে আমার অস্তিত্ব বিলীন করে দেওয়া ভালো, বিধাতা এটা করেন না কেনো?
Add caption |
যখন আমি এখানে এসে এই মানুষগুলোর কষ্টেভরা জীবন দেখি, তখন আমার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চাওয়া পাওয়া নিয়ে মন খারাপ আর হয় না৷। তাঁদের কষ্ট দেখলে মনে হয় সৃষ্টিকর্তা আমাকে কতই না সুখে শান্তি তে রেখেছেন। তখন আমার কষ্টকে আর কোনো কষ্টই মনে হয় না।
আর হ্যাঁ, আমি কলেজ ছুটির পর আমি স্টেশনে এসে আমার বাসায় যাওয়ার ভাড়ার টাকা আমি তাঁদেরকে দিয়ে, হেটেহেটে বাসায় পৌঁছাই। আর ভাবতে থাকি কবে যে আমার সামর্থ হবে তাদেরকে মন উজার করে সাহায্য করার মতো। আর এটাও ভাবি আমাদের দেশে তো এমন অনেক লোক আছে যাদের টাকার পাহাড় আছে। তারা কি একবারও রেলস্টেশনে গিয়ে একটু অসহায় মানুষের জীবনযাপন টা দেখতে পারে না !
আমি অপলক দৃষ্টিতে শিহাবের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তারপর আমরা যার যার মতো বাসায় চলে আসলাম । এর কিছুদিন পরের কথা----- এখন শীতকাল শুরু। প্রচন্ড ঠান্ডা থাকার কারণে শীতের পোশাক পড়ে আরেকটা শাল গায়ে দিয়ে বের হলাম বাড়ি থেকে। ট্রেন দিয়ে যাবো প্রায় ৩০০+ কি.মি দুরে আমার একবন্ধুর বাসায়। রাত ১১টারপর ট্রেন। শীতের রাত ১১ টা মানে বুঝতেই পেরেছেন কতটা গভীর রাত। চারদিক কোয়াশাচ্ছন্ন। ট্রেন আসতে আরও কিছু সময় বাকী। তাই ভাবলাম একটু আশেপাশের পরিবেশটা দেখি। হাতের বাম পাশে তাকিয়ে দেখি ৬০ উর্ধ্ব বয়সের এক মহিলা একটি ছেড়া ছালার চট (বস্তা) গায়ে মুরি দিয়ে কনকনে ঠান্ডায় ফ্লোরে শুয়ে শুয়ে কাঁপছে। সেখান থেকে একটু দুরে গেলাম গেলাম চা পান করতে । সেখানে দেখলাম। আরও ২জন শুয়ে আছে তবে তাঁদের গায়ে ছেঁড়া জামা ছাড়া আর কিছুই নেই। একটু পরেই স্টেশনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ এসে তাদেরকে ধমক দিয়ে উঠিয়ে দিলেন। বললো এখান থেকে উঠ। তারা ঘুমাতে পারলো না। আমি নিজেকে সেই বৃদ্ধার জীবনে কল্পনা করা শুরু করলাম। ৭০বছরের এক বয়স্ক ভাবতে লাগলাম নিজেকে। আমি ভীটে মাটি ছাড়া। ভাবতে লাগলাম কয়েকদিন ধরে পেট ভরে খেতে পারছিনা। হাত পেতে চাইতে হয় মানুষের কাছে।
শুধু এইটুকু ভেবেই চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো।
কতই না কষ্টের জীবন এটা৷
ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে যাচ্ছে। ট্রেনে উঠার জন্যে যাচ্ছি দেখি একজন বৃদ্ধার ২ টি পা নেই। হাটুর উপর থেকে কাটা। ২টা পলিথিন পায়ে বেধে, ২ টা সেন্ডেল ২ হাতে নিয়ে বাচ্চাদের মতো হামাগুড়ি দিয়ে হাঠছে।
ইশ কত কষ্ট! যাইহোক ট্রেনে উঠলাম। ট্রেন ছেড়ে দিলো। পরের স্টেশনে ট্রেন থামানো হলো। ট্রেন নাকি এখানে ২০ মিনিট দেরি করবে আজ৷ তাই একটু বের হলাম ট্রেন থেকে। সেখানে দেখি ৩ বছরের একটি বাচ্ছা হাটাহাটি করছে। ভাবলাম এত রাতে এই পিচ্ছি হাটছে! সামনে এগিয়ে দেখি এক মাঝবয়সী নারী বসে আছে৷ ছেলেটি সেই নারীর কোলে গিয়ে বসলো। জানতে পারলাম পিচ্ছিটার মা এই নারী। মা তার সন্তানকে একটি রুটি খাওয়াতে চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু কিছুতেই ছেলেটি খাচ্ছে না। জিজ্ঞেস করলাম এই তাঁর এই করুণ অবস্থার কারণ কী? তিনি জবাব দিলেন, আমি সুস্থ ছিলাম। আমার বাবা মারা গিয়েছে যখন আমি এই বাচ্চার বয়সের ছিলাম। মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাইয়ে পড়িয়ে বড় করেছে আমাকে। তারপর আমাকে বিয়ে দিলেন। কিছুদিন পর মা মারা গেলেন। আমার পায়ে একটি বাজে অসুক হওয়াতে আমার একটি পা কেঁটে ফেলে দেওয়া হলো যদিও ডাক্তার বলেছিলো উন্নত চিকিৎসা করালে আমার পা ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু কিভাবে উন্নত চিকিৎসা করাবো? টাকা তো নাই। গরীবের সন্তান আমি। বিয়েও হয়েছে এক নেশাখোরের সাথে। সে যা কাজ করে তা তাঁর নেশায়তেই খরচ করে ফেলে। ভালো চিকিৎসা করাতে পারেনি। পরে একবার ডাক্তার দেখানোর পর বললো আমার পা কেটে ফেলে দিতে হবে আর নয়তো আমার সম্পুর্ণ শরীর পঁচে যাবে। তাই কষ্ট করে কিছু টাকা মানুষের কাছ থেকে নিয়ে আমার পা কাটালাম।
আমার শরীর যখন সুস্থ হলো তখন আমার এক ছেলে হলো। ছেলেটি দু' বছুরের হওয়ার পর আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে যান । তাই খুবই কষ্টে দিন যাপন করতে হয়। আর আমার সেই ছেলেটিই আমার কোলে বসে আছে। মানুষের কাছ থেকে হাত পেতে যা পাই তা দিয়েই কিছু খাওয়াই এবং নিজে খাই। আমি না খেলেও কষ্ট হয়না । কষ্ট হয় যখন আমার সন্তানটিকে ঠিক মতো খাওয়াতে পারিনা।
একটু দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ট্রেনে উঠলাম। ট্রেন চলছে । ২টি ষ্টেশন পার করার পর যখন আরেকটি স্টেশনে ট্রেন থামালো, আমি গ্লাস লাগানো জানালা দিয়ে দেখলাম কয়েকজন ছেড়া গেঞ্জি পরে আগুন জ্বেলে চারেদিক ঘিরে আগুনের তাপ নিচ্ছে। কারণ এই কনকনে ঠান্ডায় তাঁরা ঘুমাতে পারছেনা। তাদের শীতের বস্ত্র নেই। কি আর করবে এই শীতে।
অবশেষে জার্নি শেষ করে গন্তব্যে পৌঁছালাম। ২ দিন থেকে যখন আবার ফিরে আসবো, তখন আমার ট্রেন ছিলো সকালের। আজ সুর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে সকাল থেকে। কোয়াশা কেটে গেছে। রৌদ্রজ্জ্বল এক সকাল আজ৷ স্টেশনে বসে আছি। আমার সাথে আরেকটি ছেলেও বসে আছে আমার পাশে। সেও একই ট্রেনে আসবে।
এখানেও এক ৫৫ বছর বয়স হবে এরকম এক মহিলা আসলেন টাকা তুলতে। টাকা নেওয়ারপর বললো বাবা কোথায় যাবে তুমি?
: আমার গন্তব্যের কথা বললাম।
আমি দেখলাম মহিলাটি আচল দিয়ে এক হাত ডেকে রাখছে। জিজ্ঞেস করলাম আন্টি আপনার ওই হাতে কি? আঁচল সরিয়ে দেখালেন তাঁর হাত৷ দেখলাম হাতের হার ভাঙ্গা। হার একটু উঁচু হয়ে আছে । জিজ্ঞেস করলাম কি হয়ছে আপনার হাতে?????
মহিলাটি বললোঃ বাবা, একজনের কাছ থেকে একটি গরু বাগী নিয়েছিলাম৷ কিছুদিন আগে সেই গরু গুতা দিয়ে আমার হাত ভেঙ্গে ফেলেছে৷ এই হাতে এখন প্রচুর ব্যথা করে ।
জিজ্ঞেস করলাম, আপনার ছেলে মেয়ে নেই?
তিনি বললেন, ১৫-১৬ বছর আগে আমার ছোট একটি ছিলো । আমি মেয়েটিকে কোলে নিয়ে বিভিন্ন লোকের কাছে হাত পাততেছিলাম দুধ কিনে মেয়েটিকে খাওয়ানোর জন্যে । মেয়েটি যখন ক্ষুধার জ্বালায় কান্না শুরু করতো আমার কলিজা জ্বলে যেতো বাবা। আমাকে এই অবস্থায় দেখে একজন লোক এসে বললেন, সেনাবাহিনীর মেজর আপনাকে ডাকছে। মেজর এবং মেজরের বউ মাত্র কয়েক গজ দুরে ছিলো৷ গেলাম সেখানে। সেখানে যাওয়ার পর দেখি মেজর এবং তার বউ একসাথে আছেন। জিজ্ঞেস করলেন বাচ্চাটি কি ক্ষুধায় কান্না করছে?
জী স্যার, কিছু টাকা দেন না স্যার মেয়েটারে দুধ কিন্না খাওয়াই।
মেজরের স্ত্রীর নাকি সন্তান হয়না৷ মেজরের স্ত্রী বললেন তর মেয়েটাকে আমাকে দিয়ে দে। আমার তো সন্তান নেই। তাকে আমি সন্তান হিসেবে লালনপালন করবো। সবাই জানবে এটা মেজরের মেয়ে। তর কাছে থাকলে তো তর মেয়েও বড় হয়ে ভিক্ষাই করবে। আর তাকে ঠিক মতো তুই খাওয়াতেও পারবি না।
আমি শুনেই কান্না শুরু করে দিলাম। আর বললাম,না ম্যাডাম আমার মেয়েকে আমি দিবো না।
আশেপাশের সবাই বলতে লাগলেন তুমি মেয়েটিকে দিয়ে দেও মেজরকে৷ তোমার মেয়ের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি হবে।
আমি অঝোরে কান্না করেই যাচ্ছি। পরে ভাবলাম ঠিকই তো আমি না হয় ভিক্ষা করে খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করতে পারবো৷ কিন্তু আমার এই মেয়েটি যখন একটু বড় হবে তখন সেও কি আমার মতোই হবে?
এর চেয়ে বরং আমি মেজরকে দিয়ে দেই, তাঁরা আমার মেয়েকে আদর যত্ন করবে। লেখাপড়া শিখাবে৷ ভালো জিনিস খাওয়াবে। ভালো পোশাক পড়াবে। আর আমার কাছে থাকলে তো আমার মেয়েটিকে কিছুই দিতে পারবো না।
#
এগুলো ভেবে মেয়েটিকে মেজরের স্ত্রীর হাতে তুলে দিলাম। তিনি যে কি আদর করা শুরু করলেন আমার মেয়েটাকে। বললাম মা গো, আমার মেয়েটারে কোনো দিন কষ্ট দিয়েন না।
মেজরের স্ত্রী বললেন, তুই চিন্তা করিস না। তর মেয়েকে রাজকন্যার মতো রাখবো। সে এখন থেকে আমার মেয়ে।
আমি বললাম মা, আপনার ঠিকানাটা দিয়ে যান, মাঝে মধ্যে চোখের দেখা দেখে চলে আসবো। মেজর বললেন না, ঠিকানা দেওয়া যাবে না। ঠিকানা দিলে তুই তর মেয়েকে আনতে চলে যাবি। আর আমরা একেক সময় একেক জায়গায় থাকি৷ ঠিকানা দেওয়া যাবে না। তারপর মেজর তাদের সাথের লোকটিকে টাকা দিয়ে অনেক গুলো খেলনা,কাপর-চোপর,দুধ কিনে আনতে পাঠালেন। সে গিয়ে সব কিনে আনলেন। দুধ খাইয়ে, নতুন কাপড় পড়ানো হলে আমার মেয়েকে আসলেই দেখতে রাজকন্যার মতো লাগছে। কত সুন্দর লাগছে আজ আমার মামনিকে। আমার কান্নার বেগ আরও তীব্র হতে লাগলো। একটু পর মেজর এবং তার স্ত্রী আমাকে সান্তনা দিয়ে,অনেক টাকা দিলেন।
আমি বললাম না মা, ১০ কোটি টাকা দিলেও আমি টাকা নিবো না। তাহলে আমার সন্তানকে বিক্রি করা হবে৷ আমি আমার সন্তানকে বিক্রি করবো না।
কোনো মা তার সন্তানকে বিক্রি করতে পারে না। আমার টাকা লাগবে না মা৷ আমার মাইয়াটারে একটু দেইখা রাইখেন মা।
তিনি বললেন, ঠিকাছে৷
মেয়েটিকে নিয়ে তারা চলে গেলো। আমি কয়েক বছর পাগলের মতো ঘুরেছি।
এখনো মেয়েটার কথা মনে হলে কইলজাটা ফাইট্টা যায় রে বাবা।
স্পীচলেস হয়ে তাকিয়ে আছি মহিলাটার দিকে৷
সে ঘটনা বলছে আর কান্না করছে৷ তার চোখ দিয়ে পানি পরছে অনবরত ।
আর বলছে বাবা, যদি একটাবার আমার মেয়েটাকে চোখের দেখা দেখতে পারতাম!
ঘটনা শুনে কেমন যেনো সব কিছু নীরব মনে হচ্ছে।
মনে হচ্ছে এই মায়ের কান্নার সাথে সাথে স্টেশনের প্রতিটা ইট, প্রতিটা দেওয়ালও কান্না করছে।
অনেক শান্তনা দিলাম। কিন্তু আমি জানি সান্তনায় তো কাজ হবে না। কারণ সে তো মা...