গবেষণা প্রস্তাবনা (Research proposal)
মানুষ অজানাকে জানতে চায়। পৃথিবীর ও
তার বাইরের অপার রহস্যের জট খুলে সবার সামনে তুলে ধরতে চায়, কোন ঘটনা কেন ঘটছে তা জানতে চায়। মানুষের মনে প্রশ্ন জাগার মধ্য দিয়ে প্রকৃত
সত্যকে জানার উদ্দেশ্যে গবেষণার সূত্রপাত ঘটছে।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাচীনকালের সেই
গুহাবাসীর মানুষ হতে আজকের এই প্রযুক্তিনির্ভর জগতে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব হয়েছে
একটি কারণেই, আর তা হলো গবেষণা । কোন একটি কাজকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হলে একটি
পরিকল্পনা হয়। একজন গবেষক তাঁর গবেষণা
পরিচালনা করার জন্যে পূর্ব পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। গবেষক তার এই পূর্বপরিকল্পনা
অনুযায়ী গবেষণার কাজ সম্পাদন করে থাকেন। গবেষণার এই পূর্বপরিকল্পনা বা
রোডম্যাপকেই গবেষণা প্রস্তাবনা (Research proposal) বলে৷
গবেষণার এই প্রস্তাবনা সমগ্র গবেষণা কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ
অংশ। এটিকে গবেষণার নীলনকশা বলা হয় -
"Research proposal is an
actual blue-prints of research. "
গবেষণা প্রস্তাবনা ব্যাপারে M.Jainulabdeen তাঁর handbook of research
গ্রন্থে বলেন,
·
Research proposal deals with
the ideas of researchers about what
reasearch he wants to do, what objectives and methodology he has set for the
research, how much time and resources are required to complete the research.
"
অর্থাৎ একজন গবেষক কি গবেষণা করতে চান তার ধারণাসমূহ, তিনি গবেষণার
জন্য কি উদ্দেশ্যাবলি ও পদ্ধতি অনুসরণ করতে চান, গবেষণাটি সম্পন্ন করতে কত সময় ও
সম্পদের প্রয়োজন গবেষণা প্রস্তাব এসকল বিষয় নিয়ে কাজ করে।
একটি উত্তম গবেষণা প্রস্তাবনায় যে সকল উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকে তা হল
-
√ গবেষণার শিরোনাম (title of the
study)
√ ভূমিকা(introduction)
√ গবেষণার সমস্যার বিবরণ (statement of
the research problem)
√ গবেষণা পদ্ধতি (method of
research /research methodology)
√ সাহিত্য পর্যালোচনা (literature
review)
√ গবেষণার তাৎপর্য ও বিস্তৃতি (significant
and scope of research)
√ সীমাবদ্ধতা (limitation of
research)
√ গবেষণার সময়সীমা এবং বাজেট (research
timeline and budget)
√ সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি (bibliography/
reference)
√ পরিশিষ্ট (appendix)
গবেষণার
শিরোনাম
যে বিষয় নিয়ে গবেষণা করা হবে তার একটি সুনির্দিষ্ট শিরোনাম থাকতে
হয়। অর্থাৎ গবেষক যে বিষয়ে গবেষণা করবেন তার এমন একটি শিরোনাম ঠিক করবেন যার মধ্যে
গবেষণার মূল উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়। গবেষণার শিরোনামটি এমন হতে হবে যেন খুব বেশি
বড় না হয়, আবার খুব বেশি ছোট না হয়।
সংক্ষেপে বলতে গেলে,
" গবেষণার শিরোনাম টি এমন হতে হবে যেন তা দেখে যে কেউ বিষয়বস্তু সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ
করতে পারে"
ভূমিকা
ভূমিকায় সমস্যার স্বরূপ,
বাস্তবতা, গুরুত্ব ইত্যাদির বর্ণনা
থাকবে। আর গবেষণার উদ্দেশ্য, গুরুত্ব ও
প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে বিবৃত করতে হবে।
গবেষণার সমস্যার বিবরণ
যে বিষয়ের উপর গবেষণা পরিচালনা হবে তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে
দিতে হবে। গবেষণা প্রস্তাবনা পত্রে সমস্যার বিবরণ এমনভাবে দিতে হবে যেন ধারাবাহিক
বর্ণনা পাওয়া যায়। এতে সমস্যার ধরণ,প্রকৃতি ছোট আকারের বিশ্লেষণ করে এমনভাবে
উপস্থাপন করতে হবে, যাতে সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়।
গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
গবেষণা প্রকল্পে প্রকৃতপক্ষে কি অনুসন্ধান বা বিশ্লেষণ করা হবে তা
এখানে সুস্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। গবেষণার উদ্দেশ্য হতে হবে সংক্ষিপ্ত,
ধারাবাহিক ও সুনির্দিষ্ট বাস্তবায়নযোগ্য। গবেষণার ফলাফল কি হতে পারে তার প্রতিফলন
ও উদ্দেশ্য এই অংশের মধ্যে থাকবে।
গবেষণা পদ্ধতি
গবেষণাকার্য পরিচালনার জন্যে
কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে এবং কেন প্রয়োগ করা হবে তা বর্ণনা করতে হবে।
এক্ষেত্রে নমুনায়ন, তথ্য সংগ্রহ এবং তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি প্রয়োগ
করা হবে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।
সাহিত্য পর্যালোচনা
গবেষণার জন্য নির্বাচিত ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সর্ম্পকে যথার্থ ধারণা
লাভের জন্য বিভিন্ন গ্রন্থ, সাময়িকী, প্রতিবেদন, কলাম ও পত্রপত্রিকা পাঠ আবশ্যক।
এর মাধ্যমে গবেষণার বিষয় সম্পর্কে যথাযথ ধারণা পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পূর্বে গবেষণা হয়েছে কিনা বা গবেষণা হলেও, তার মধ্যে কি ঘাটতি
ছিল তা জানা যায়।
গবেষণার তাৎপর্য ও বিস্তৃতি
যে সমস্যাটিকে গবেষণার বিষয় হিসেবে বাছাই করবেন, তার তাৎপর্য,
গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই গবেষককে এখানে ফুটিয়ে তুলতে হবে। গবেষণাটি কি কি
কাজে লাগবে কিংবা দেশ ও জাতির কি উপকারে আসবে তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে
গবেষণার বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা গবেষক সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করবেন।
সীমাবদ্ধতা
কোন গবেষণাতেই সামগ্রিক বিষয় কে তুলে আনা সম্ভব নয়, তা অনস্বীকার্য।
অন্যভাবে বলা যায় স্বয়ংসম্পূর্ণ গবেষণার
দাবিটি অনেকাংশেই প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। তাই গবেষণাটির সীমাবদ্ধতা লিখতে হয়।
গবেষণার সময়সীমাও বাজেট
গবেষণা করার জন্যে নির্দিষ্ট একটি সময় ঠিক করে নেওয়া হয়, সেই সাথে
উক্ত সময়ের মাঝেই গবেষণাটির কতটা উন্নত রাখা যায় তা মাথায় রাখতে হয়, আবার
গবেষণা কাজ পরিচালনার জন্য অর্থ প্রয়োজন। গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের উৎস
এবং উক্ত অর্থ কোন খাতে ব্যয় হবে এবং কীভাবে ব্যয় করা হবে তার বিশদ বিবরণ থাকতে
হবে এই অংশে।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি
গবেষণার প্রস্তাবনা পত্র প্রস্তুত করার সময় গবেষক যেসব বই-পুস্তক,
জার্নাল, প্রবন্ধ, সাময়িকী, পত্রপত্রিকা অথবা কোনো থিসিস থেকে সাহায্য নেবেন
গবেষণা পত্রের শেষে তথ্যসূত্র হিসেবে তালিকা করে দিতে হবে।
পরিশিষ্ট
এ অংশে গবেষক অতিরিক্ত সংগৃহীত তথ্য ও আলোকচিত্র উপস্থাপন করবেন।