গবেষণা কাকে? গবেষণার প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্যসমূহ
গবেষণাকে বলা হয় বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের একটি শিল্প।গবেষণার মাধ্যমেই অজানাকে জানতে পারা যায়।
"সাধারণ অর্থে গবেষণা হলো সত্য ও জ্ঞানের অনুসন্ধান।"১
রেডম্যান এবং মোরি (Redman and Morey) বলেন,
"Research is the systematized effort to gain new knowledge". অর্থাৎ নতুন জ্ঞান অর্জনের পদ্ধতি মূলক চেষ্টাই গবেষণা।
অন্যদিকে Clifford woody. বলেন ,
"সমস্যার সংজ্ঞায়ন পুর্বানুমান এবং এর সমাধান তৈরি করা।"
সুরভি বন্দোপাধ্যায় বলেন,
"কোন বিষয়ে সুচিন্তিত ও সম্বন্ধ অনুশীলন ও অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে বিশেষ সত্য বা তত্ত্বে উপনীত হওয়ার নামই গবেষণা।"২
Oxford Advanced Learner's Dictionary তে বলা হয়েছে,
"Research is a careful study or investigation, specially to discover new facts or information."৩
প্রকারভেদঃ
বিভিন্ন গবেষকগণ নানা প্রকারের ভাগ করেছেন। সবগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়,
প্রধানত গবেষণা দুই প্রকার। যথাঃ
এক. মৌলিক গবেষণা (Fundamental or basic Research)
দুই. প্রায়োগিক গবেষণা (Applied Research)
এগুলো আবার তিন প্রকার।
১) পরিমাণগত গবেষণা (Quantitative Research)
২) গুণগত গবেষণা (Qualitative Research)
৩) মিশ্র গবেষণা (Mixed Research)
বৈশিষ্ট্যঃ
১)গবেষণা হলো মৌলিক কাজ। গবেষণা গবেষকের মৌলিকতার স্বাক্ষর বহন করে।
২)প্রতিটি গবেষণাকর্মের সুনির্দিষ্ট কতগুলো উদ্দেশ্য থাকে।এই উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে এটি গবেষণা কার্যকরী চালিত হয়। বস্তুত উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য ব্যতীত কোনো গবেষণা কর্মই সম্পন্ন করা যায় না।
৩)সাধারণত সুনির্দিষ্ট একটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই গবেষণা কার্য পরিচালিত হয়।
৪) কোন বিশেষ দর্শন দৃষ্টিভঙ্গি বা মতবাদ এর দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নিরপেক্ষভাবে গবেষণা করতে হয়।
৫)গবেষণার মান নির্ভর করে গবেষকের কৌতুহলী ও অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিভঙ্গির উপর।
৬)গবেষণার মূল বিষয় সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানে নিয়ম নীতি অনুসরণ করতে হয়। জ্ঞান ও পান্ডিত্যের শৃঙ্খলাবোধ গবেষণার প্রথম শর্ত।
৭)কোন বিষয়ে নতুন কোন নিয়ম নীতি বা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া এবং সেই সিদ্ধান্তের সাধারণীকরণই হলো গবেষণার মূল উদ্দেশ্য।
৮) গবেষণা যেহেতু একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, তাই এর মূল ভিত্তি যুক্তি,পরিমাণ বা পরিসংখ্যানগত উপস্থাপনার উপর নির্ভরশীল
৯) গবেষণা হলেও তার কারণ ও ফলাফল। অর্থাৎ অনুসন্ধান ও সিদ্ধান্তের এক সম্মিলিত গঠন পদ্ধতি।
১০) হলো প্রণালীবদ্ধ তথ্য অনুসন্ধান। অর্থাৎ গবেষণা হচ্ছে অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ এবং ধারণা ও তত্ত্ব গঠন করার একটি সুশৃঙ্খল পদ্ধতি।
গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
১) নতুন কোন গবেষণামূলক ডিগ্রী অর্জন ;
২ ) বাস্তব সমস্যার সমাধান প্রদান করা ;
৩ ) যে সমস্যার কোনো সমাধান হয়না তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করা ;
৪)সৃজনশীলতার পরিচয় প্রদান করা;
৫)সমস্যা চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে সমাজকে সেবা প্রদান করা;
৬)সমর্থিত ও সমাজ চেতনা বৃদ্ধি করা;
৭)মানুষ ও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের কল্যাণ বৃদ্ধিকরণ ;
৮)বৈজ্ঞানিক প্রয়োগের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর বের করা;
৯)ইতিপূর্বে মানুষের কাছে অজানা ছিল অবহিত করা।
পি.ভি ইয়ং এর মতে গবেষণার উদ্দেশ্য হলোঃ
১)নতুন তথ্য বা ঘটনার আবিষ্কার করা বা পুরোনো ঘটনা কে যাচাই করা
২)তাদের পর্যায়ক্রমে আন্তঃসম্পর্ক এবং কারণ গঠিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা।
৩)নতুন বিজ্ঞানভিত্তিক কৌশল প্রত্যয় এবং তত্ত্বসমূহ উন্নত করা যা মানবমর আচরণের নির্ভরযোগ্য ও সিদ্ধ (Reliable and valid) অধ্যয়নে সহায়তা করে।
তথ্যসূত্র:
১শাহজাহান তপন, থিসিস ও অ্যাসাইনমেন্ট লিখন পদ্ধতি ও কৌশল; ঢাকা প্রতিভা ১৯৯৩; পৃঃ০৯
২) সুরভি বন্দোপাধ্যায়, গবেষণা প্রকরণ ও পদ্ধতি; দ্বেজ পাবলিশিং;১৯৯৫,পৃ-১৫
৩)Oxford Advanced Learner’s Dictionary.
আরও পড়ুন>>>
ফোকলোর চর্চায় আশুতোষ ভট্টাচার্য Ashutush Bhattacharya in Folklore studies.